ড্যাপ নিয়ে পৌর ও সিটি করপোরেশনগুলোর যত প্রস্তাব

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) জোন-ভিত্তিক পরিষেবা মূল্য নির্ধারণসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলো। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় পরিবেশ দূষণ হবে না— এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবও করা হয়। পাশাপাশি ক্ষুদ্র প্লট মালিকদের প্রণোদনার মাধ্যমে গুচ্ছ আকারে ব্লক বেইজড ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ড্যাপ বলছে, এসব প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করে গ্যাজেট প্রকাশ করা হবে।

ড্যাপ সূত্র জানিয়েছে, রাজউকের আওতাভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ড্যাপ প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে তিনটি জেলা—  ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর; ৪টি সিটি করপোরেশন—  ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ; ৫টি পৌরসভা—  সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ, সোনারগাঁও ও কাঞ্চন এবং ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সম্প্রতি এই সংস্থাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ড্যাপ। সভাপতিত্ব করেন ড্যাপ রিভিউ কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সভায় বেশ কিছু প্রস্তাবনা উত্থাপন করে সিটি করপোরেশনগুলো।

সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নির্মিত ও নির্মিতব্য ডাম্পিং স্টেশনগুলোর জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ ও স্থানগুলো ড্যাপে চিহ্নিতকরণ করা প্রয়োজন। তার এ প্রস্তাব ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার খালগুলোর সীমানা চিহ্নিত না থাকায় বেশিরভাগই দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও দখল হাওয়া খাল উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে। নদীগুলোর পাশাপাশি নতুন ড্যাপে খালের সীমানা নির্ধারণ প্রয়োজন। এ ছাড়া ড্যাপে সুনির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, পাবলিক টয়লেট, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসগুলোর জন্য পৃথক স্থান চিহ্নিত থাকা দরকার বলেও জানান তিনি।

মেয়র আতিক আরও বলেন, নদী ও খাল উদ্ধারের মাধ্যমে জলপথের যোগাযোগ তথা ব্লু নেটওয়ার্ক সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ নিধন রোধ ও বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে গ্রিন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা প্রয়োজন। হাতিরঝিল ও গুলশান লেকের পানি দূষণ রোধ এবং যানজট নিরসনে মহাখালীতে নির্মিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি ও সেতুর ভবন স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডিএনসিসি অধিভুক্ত এলাকার জন্য প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে ড্যাপ হালনাগাদ করতে হবে বলে অভিমত তার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের নাম উল্লেখ থাকা দরকার। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে ঢাকার ওপর চাপ কমানোর বিষয়েও ড্যাপে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

মেয়র তাপস আরও বলে, ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা, ওয়াকওয়ে ও ড্রাইভওয়ে প্রশস্ত করা, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণ, ট্রান্সপোরটেশন ও কমিউনিটি সিস্টেম তৈরি, রিকশা চলাচলের জন্য ৪ লেন সড়ক নির্মাণ এবং ওয়ার্ড-ভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে।

ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপের আওতাভুক্ত এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণে ক্ষুদ্র প্লট মালিকদের প্রণোদনা সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে গুচ্ছ আকারে ব্লক বেইজড ভবন নির্মাণের বিষয়টি ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন চিলাই ও তুরাগনদী খসড়াও এতে থাকবে। বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে নির্মিত ও নির্মিতব্য ডাম্পিং স্টেশনের খসড়া ড্যাপে চিহ্নিত করা হবে। মহানগরীর খালগুলোর ক্ষেত্রে সীমানা ও সিটি করপোরেশনের জোন অফিসগুলোর জন্য পৃথক স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হবে।

Dap

সভায় সিটি ও পৌরসভাগুলো আরও জানিয়েছে, মহানগরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘১৫ মিনিট কনসেপ্ট’ চালু করতে হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকার ওপর প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানটির আলোকে ড্যাপে এ পরিকল্পনা হালনাগাদ করতে হবে।

আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ড্যাপ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করি। তাদের মত নিই। সেটারই অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সঙ্গে বসা হয়। তাদের মতামত ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’