সেহরির ট্রেন্ড পৌঁছে গেছে মাওয়া ঘাটে

রোজার সময় ভোর রাতে ঢাকায় জেগে ওঠে অন্য এক প্রাণ। বাইরে গিয়ে সেহরি করা তো হয়ই, চলে দেদার ঘোরাঘুরি। এমন ধারা শুরু হয়েছে বেশ কবছর হলো। আগে বাইরের সেহরির ট্রেন্ড পুরান ঢাকায় বেশি দেখা যেত। ইদানিং এই ট্রেন্ড চলে গেছে মাওয়া ঘাটেও।

করোনার কারণে গেলো দুবছর রমজান মাসে বিধিনিষেধ থাকায় রাতে সেহরি খেতে বের হওয়ার ট্রেন্ডে ভাটা পড়েছিল। বাইরের খাবার খেতে ভরসা ছিল অনলাইন সেবা। তবে সেহরি খেতে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যাওয়ার চল করোনার আগেও কিন্তু দেখা যায়নি।

বড়জোর পুরান ঢাকায় যাওয়া কিংবা বাসার কাছের কোনও রেস্তোরাঁতেই যেত মানুষ। যদিও পুরান ঢাকা এখনও জমজমাট, তবে ইলিশের টানে লোকে এখন সেহরিতেও হানা দিচ্ছে মাওয়ায়।

মাওয়া ঘাটের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী জানান, কয়েক বছর আগেও মাওয়া ঘাটে সেহরিতে ক্রেতার আনাগোনা ছিল না। ফেরিঘাটে যাত্রী পারপার চালু থাকায় সারারাতই এখানকার খাবারের দোকান খোলা থাকে।

মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেতে আসা ফারুক জানান, ইলিশ খেতে আসাটা মূলত ভ্রমণের অংশ। তবে সেহরিতে এলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। রমজানে এমনিতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম পাওয়া যায়। কারণ ইফতারের আয়োজন করতে হয়। সবশেষ করে ঘরের বাইরে সেহরি করতে আসাটা বেশ রিফ্রেশিং মনে হয়। তাছাড়া মাওয়া ঘাটে আসার সুন্দর একটি রাস্তা হয়েছে। অনায়াসেই চলে আসা যায়।

সাংবাদিক মাহমুদ মানজুর সম্প্রতি মাওয়া ঘাটে সেহরি করতে গিয়েছিলেন সবান্ধব। মাওয়া ঘাটে সেহরির যুক্তি খণ্ডালেন তিনি—‘সেহরিতো রোজ বাসায় খাই। একদিন না হয় বন্ধুদের নিয়ে মাওয়া ঘাটে খেলাম। তাছাড়া অন্য সময়ে তো ভোররাতে এভাবে খাওয়ার উপলক্ষ পাওয়া যায় না। তাছাড়া এটা তথাকথিত সেহরি পার্টি না। এটা হলো একটা পর্যটন এলাকায় গিয়ে সেহরি করা। ইফতার যেমন অনেকে মিলে আনন্দ করে করি—বাসায়, অফিসে, তারকা হোটেলে, সেহরিটাও আনন্দময় হলে ক্ষতি কী?’

Untitled-1

তবে রেঁস্তোরায় যাওয়ার চল আছে এখনও। রাত ১টা থেকেই বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আনাগোনা শুরু হয় ক্রেতার।

তাই রাজধানীর বেশ কিছু রেস্তোরাঁ সেহরি পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে এমন রেস্তোরাঁ আছে কিছু। সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেহরিতে মানুষের মধ্যে অন্যরকম আমেজ কাজ করে। বেশিরভাগ মানুষই পরিবারসহ আসেন। কেউ বুফে সিস্টেমে কিংবা অর্ডার সাপেক্ষে সেহরির আয়োজন করেন।

সাত মসজিদ রোডের ‘কড়াই গোস্ত’ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আগে এভাবে সেহরিতে এত রেস্তোরাঁ খোলা থাকতো না। মানুষ উৎসাহ নিয়ে আসছে পরিবারসহ।

১৫ বছর ধরে রেস্তোরাঁ খাতে কাজ করছেন ক্যাফে সাও পাওলোর সহকারী ম্যানেজার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সেহরিতে অতিথিদের আগমন অনেকটা নির্ভর করে বুফে সিস্টেমের ওপর। কারণ সেহরিতে ভাত জাতীয় খাবারের সঙ্গে একটু মাছ-মাংস, সবজি এগুলোর চাহিদা থাকে। সেহরিতে মানুষ চাইনিজ, থাই কিংবা কন্টিনেন্টাল খাবারে আগ্রহ পায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই বাইরে সেহরি খাওয়ার ট্রেন্ড বদলাচ্ছে। একসঙ্গে ঘোরাঘুরি হচ্ছে, খাওয়াও হচ্ছে। আট ঘণ্টা অফিস করলে রাস্তায় চলে যায় আরও চার ঘণ্টা। এদিকে বন্ধু ও পরিবারকে সময় দিতে হয়। তখন মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় বাইরে খাওয়াও হলো আবার ঘোরাও হলো।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ধানমন্ডি এলাকায় চাপ কম থাকলেও গুলশান-বনানী এলাকায় অনেক বেশি। সেখানে রেস্তোরাঁ ফুল থাকে। আমি আগে যেখানে কাজ করতাম সেখানে সেহরিতে খালি পাওয়া যেতো না।’