রেস্তোরাঁগুলোই এখন বিনোদন কেন্দ্র

আকতার মাহমুদ পরিবারসহ ঈদের দিন বেরিয়েছেন। কিছুক্ষণ গাড়িতে ফাঁকা রাস্তায় ঘুরে পরিবারসহ গেলেন গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয়। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটালেন। রাতের খাবার শেষে ফিরলেন বাসায়।

ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়েছিলেন হিমেল। কোথায় আড্ডা দেবেন তা ভাবতে ভাবতে গেলেন ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে। জায়গা না পেয়ে গেলেন আরেক রেস্তোরাঁয়। সেখানে ঈদের আড্ডা জমালেন বন্ধুদের সঙ্গে।

রাজধানীর অনেক পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীর আড্ডার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে রেস্তোরাঁগুলো। শুধু ঈদ নয়, সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা সরকারি ছুটিতেও সরগরম ঢাকার রেস্তোরাঁগুলো। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা একটু ভালো সময় কাটানোর জন্য অনেকেই বেছে নেন রেস্তোরাঁর পরিবেশ। বলা যায় এই ট্রেন্ড চালু হয়েছে সম্প্রতি। আর তাই রমজানে ইফতারের পাশপাশি সেহরিতেও মানুষজনের ভিড় দেখা গিয়েছিল রেস্তোরাঁগুলোতে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনোদনকেন্দ্রের স্বল্পতা, যান্ত্রিক জীবনের বাইরে করার মতো কিছু না পেয়েই রেস্তোরাঁমুখী হচ্ছে অনেকে। সেখানেই খুঁজে পান বিনোদন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিউদ্দিন জানান, ঢাকায় বিনোদনের জায়গা খুবই সীমিত। সিনেমা হল, শিশুদের পার্কের বাইরে আছে অগণিত রেস্টুরেন্ট। খাবার মোটামুটি সবারই প্রিয়। যাদের গাড়ি আছে তারা হয়তো পরিবার নিয়ে একটু ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতে বের হয়। তারপর ঘুরাঘুরি শেষে বাইরে কোথাও খাওয়াটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। জীবনটা এ চক্রেই ঘুরছে। মানুষ যাবে কোথায়?

তিনি আরও বলেন, বিদেশে বিনোদনের অনেক আয়োজন থাকে। আমাদের সেভাবে নেই। গত কয়েক বছরে রেস্টুরেন্ট অনেক বেড়েছে ঢাকায়। এগুলোই এখন বিনোদন কেন্দ্র। রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়া ও ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার মাঝেই যেন জীবনের সব বিনোদন আটকে আছে।

সাব্বির আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের জেনারেশন বিনোদন বলতে বোঝে রেস্টুরেন্টে যাওয়া। কেউ কেউ ঘোরাঘুরিটাকে উপভোগ করে। কিন্তু এরপর আবার বসার জায়গা বলতেই চলে আসে রেস্তোরাঁর আড্ডা।

 

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোতেও তাই দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। ঢাকার ধানমন্ডি, খিলগাঁও, ওয়ারী, মিরপুর ছাড়াও বিভিন্ন শপিং মলের ফুড কোর্ট ঈদে খোলা থাকায় সেখানে প্রচুর মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে মানুষের রেস্টুরেন্টে আসা স্বাভাবিক বিষয়। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা তো সময় পান না, তারা পরিবারকে সময় দিতে প্রথমেই বেছে নেন রেস্টুরেন্ট।

ধানমন্ডির একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বললেন, মানুষের সময় কাটানোর জায়গা খুব কম। যে কারণে খাবারের দোকানে এত ভিড়। এর জন্য অনেক নতুন রেস্তোরাঁ আসছে। চাহিদা না থাকলে তো আসতো না।

মানুষের ট্রেন্ড যে বদলেছে সেটার ধারণা পাওয়া যায় ১৫ বছর ধরে রেস্টুরেন্ট শিল্পে কর্মরত ক্যাফে সাও পাওলোর সহকারী ম্যানেজার জিল্লুর রহমানের অভিজ্ঞতা থেকে।

তিনি বলেন, কয়েকবছর ধরেই ট্রেন্ড পাল্টাচ্ছে। যে কারণে মানুষ এবার রাতেও বের হয়েছে সেহরির জন্য। ৮ ঘণ্টা অফিসের সঙ্গে রাস্তায় যায় আরও ২-৪ ঘণ্টা। এরপর ব্যক্তিগত কত কাজ থাকে। তাই পরিবারের কথা ভেবে মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় বাইরে খাওয়া হলো আবার ঘোরাও হলো।