‘হাওয়াই’ বরাদ্দ দেওয়া ১৪৮ দোকান ভাঙবে দক্ষিণ সিটি

নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেট দক্ষিণের (লেপ-তোশক মার্কেট) দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ‘অবৈধভাবে’ নির্মিত ১৪৮টি দোকান ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কেটের অবৈধ অংশ ভাঙতে সম্পত্তি বিভাগ থেকে মেয়রের অনুমোদন পাওয়া গেছে। শিগগিরই এই অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হবে।

ডিএসসিসির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে দক্ষিণ সিটির সার্ভেয়ার মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন ও সৈয়দ রুমান ও কানুনগো মোহাম্মদ আলী পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের পছন্দের লোককে এই মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয়তলায় অনির্মিত ছাদের ৭৪টি দোকান মাসিক প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ভাড়ার অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় এবং নিজ খরচে ভবন নির্মাণ অনুমতি দেওয়া হয়।

ডিএসসিসির সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিধিবিধান বা আইনে সিটি করপোরেশনের জায়গায় অস্থায়ীভাবে মাসিক ভাড়ায় বরাদ্দ গ্রহীতাদের পাকা ভবন নিজ খরচে নির্মাণের অনুমতি প্রদানের বিধান না থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ জমি অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় তারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, এই মার্কেটের দোকান নং ৫০ থেকে ৮৩/১-এর পেছনে পরিত্যক্ত জায়গা বরাদ্দের জন্য দক্ষিণ সিটির তৎকালীন প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি একেএম সামছুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে আগের বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত নিচতলার ৩৭ জন দোকান-মালিকের নাম, ঠিকানা ও সইসহ একটি তালিকা ছিল। ওই তালিকার প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই ছিল। নিচতলায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা শুধু তাদের লাগোয়া দক্ষিণ পাশের পরিত্যক্ত অংশ ব্যবহারের জন্য চেয়েছিলেন। বহুতল মার্কেট নির্মাণ কিংবা ওপরতলা বরাদ্দের জন্য আবেদন করেননি।

সংশ্লিষ্ট নথিতে দেখা যায়, পরিত্যক্ত জায়গা ও দোকানগুলোর ওপরে প্রথম ও দ্বিতীয়তলার ছাদ নিজ খরচে করপোরেশনের আর্থিক সহায়তা ছাড়া মার্কেট সংস্কার কাজসহ দোকান নির্মাণের এবং অস্থায়ী বরাদ্দের বিষয়ে আবেদন রয়েছে। আবেদনের সঙ্গে ওই তালিকা পরিবর্তন করে আরও নতুন ৭৪ জনের নাম সংযুক্ত করে প্রথম ও দ্বিতীয়তলার কল্পিত ছাদের দোকান বরাদ্দ নম্বর ও বরাদ্দ প্রাপকের একটি তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যুক্ত এই তালিকায় আগে বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত নিচতলার লেপ-তোশক মার্কেটের ৩৭ জনের সইও ঠিক নয় এবং নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির (দক্ষিণ) সভাপতি ও সম্পাদকের সই নেই। যাতে শুধু ডিএসসিসির সার্ভেয়ার সৈয়দ রুমান, কানুনগো মোহাম্মদ আলী ও তৎকালীন সম্পত্তি কর্মকর্তার অনুস্বাক্ষর রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ‘এই মার্কেটটি ২০১২ সালের দিকে একতলা ছিল আর ছাদ ছিল। সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা টিনের ছাদের ওপর কিছু দোকান ‘হাওয়াই’ বরাদ্দ দেন, যার কোনও ভিত্তি নেই। কারণ, টিনের ছাদে কোনও দোকান বরাদ্দ হয় না। করা যায় খোলা জায়গায়। আর স্থায়ী স্থাপনার ওপর সিটি করপোরেশন কখনও অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় না।’

তিনি আরও জানান, যারা বরাদ্দ দিয়েছিলেন, কারও চাকরি নেই এবং তারা বরাদ্দের এই ফাইলও গায়েব করে দেয়।

মার্কেটটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, তিনতলা মার্কেটটি এখন পুরোটি ইট-সিমেন্টের ভবন। নিচতলায় আছে বেডিংয়ের দোকান। আর ওপরতলায় কিছু টেইলার্স, প্রেস ও কোচিং সেন্টার, যার বেশিরভাগই ভাড়া দেওয়া। এখানে দোতলায় মার্কেট মালিক সমিতির কার্যালয় রয়েছে।

জানা যায়, স্থায়ী বরাদ্দের দাবিতে এই মার্কেটের দোকান মালিক ও বর্তমান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু শাহাদাত লাবলু ২০১৩ সালে একটি মামলাও করেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাইকোর্ট বলছেন আমরা সবাই বৈধ। রায়ের কপি সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়া আছে। আদালত বলেছেন, যারা অস্থায়ী বরাদ্দ নিয়ে দখলে রেখেছেন, তারা বৈধ। অবৈধ যদি কেউ বলে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা মার্কেট নির্মাণ করার পর সিটি করপোরেশন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নিজ খরচে বুয়েটের দ্বারা ভবনের সক্ষমতা ও পরীক্ষা করা হয়।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে এ মার্কেটে ১৮৫টি দোকান আছে আর সিটি করপোরেশন বলছে নিচতলার ৩৭টি দোকান মালিক শুধু বৈধ।

মো. আবু শাহাদাত লাবলু বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছিলাম স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়ার। তারা আমাদের অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়। পরবর্তী সময়ে আমাদের নিজ খরচে নির্মাণ করতে বলে। পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল সাহেবের সময় (২০১৭ সালে) আমাদের স্থায়ী বরাদ্দ দেয়।’

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘মেয়র দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে এলে এটা ভাঙার কাজ শুরু হবে। আর আমরা ভাঙার সময় আইন-কানুন দেখেই ভাঙবো।’