রাজধানীতে ছাদে ছাদে বিশ্বকাপ উন্মাদনা

আর মাত্র এক দিনের অপেক্ষা। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। আগামী এক মাস বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনা-উন্মাদনা ছুঁয়ে যাবে সারা বিশ্বকে। বৈশ্বিক এই জনপ্রিয় আসরে বাংলাদেশ ফুটবল দল না থাকলেও প্রিয় দলের সমর্থনে বিভোর থাকেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। প্রতি বিশ্বকাপে তারা প্রিয় দলের পতাকা উড়িয়ে জানান দেন ভালোবাসা, প্রিয় দল নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।

রাজধানীর গলিগুপচির দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয় গ্রাফিতি এবং বাসাবাড়ির ছাদে ওড়ানো হয় পতাকা। বাদ যায় না পরিবহন, চায়ের দোকান ও অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। তেমনই আজ দেখা মিলেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা বড় দলগুলোর পতাকা পতপত করে উড়তে দেখা গেছে।

যদিও ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশিরা ফুটবল-পাগল জাতি। মাঝখানে ক্রিকেট এসে তা দখল করে নেয়। কিন্তু প্রতি চার বছর পর যখন বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়, তখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে সবাই মেতে উঠে ফুটবল উন্মাদনায়।

এ পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অধিভুক্ত ২১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। নিজ দেশের এই অভস্থানে মোটেও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। বিশ্বের শক্তিশালী প্রিয় দল নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দেশের ফুটবলপ্রিয় মানুষ।

চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতেই বিপণিবিতানে ভিড় জমে। ফুটবলে একটি দলের মনোনীত কয়েক রঙের জার্সি থাকে। সমর্থকরা পছন্দসই জার্সি কিনে নেন। এ সময় দরজি দোকানেও চলে হরদম ব্যস্ততা। কারণ মনের মতো জার্সি না পেলে ছুটে যান দরজি দোকানে। সেখানে নিজ নাম ও প্রিয় তারকার নম্বরসহ সাইজমতো বানিয়ে নেন জার্সি।

ফুটবলপ্রেমীরা তাদের পছন্দের দেশের পতাকা হাটবাজার ও বাসা-বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাছের ডালেসহ বিভিন্ন জায়গায় উত্তোলন করেন। অনেক সমর্থক বিদেশি পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করছেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে কোনও তোয়াক্কা করছেন না কেউ।

বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা বড় দলগুলোর পতাকাই বেশি উড়তে দেখা যায়।

তবে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকই বেশি। তৃতীয় সারিতে জার্মানির সমর্থকও কম নয়। বেশির ভাগ সমর্থক বুঁদ হয়ে থাকে মেসি, রেনালদো আর নেইমারকে নিয়ে। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর মেসির মধ্যে কে সেরা লড়াই চললেও, রোনালদোর পর্তুগালের সমর্থকও কম নেই। আর নেইমার আলোচনায় থাকেন শক্তিশালী ব্রাজিলের কারণে।

আবার ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশে অতিরঞ্জনও দেখা যায়। এ দেশে ফুটবলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় দিয়েগো ম্যারাডোনার জন্যও জীবন দেওয়ার ঘটনা আছে। আবার প্রিয় দলের জার্সি টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত হওয়া, শারীরিকভাবে পঙ্গু হওয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। কোনও কোনও জেলায় মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এসবকে স্রেফ অসচেতনতা, বাড়াবাড়ি ও অজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।

হালের ফেসবুক হয়ে উঠেছে প্রিয় দলের শক্তিমত্তা ও বিশ্বকাপ ট্রফি কয়টা তা জাহির করার একমাত্র হাতিয়ার। চলে পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার। এ নিয়ে চলে বাগযুদ্ধ। কেউ কেউ তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হন। অনেকের মধ্যে শুরু হয় ব্যক্তিগত আক্রণ। যা একটি শান্তিপ্রিয় খেলাকে খেলার জায়গায় না রেখে অতি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে।