প্রথম মেট্রো লাইন উত্তরা-মতিঝিল কেন

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। যানজটপূর্ণ রাজধানীতে যুক্ত হওয়া প্রথম মেট্রো লাইনটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। লাইনটির প্রথম স্টেশন উত্তরায়; যা রাজধানীর অন্যতম কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আবার মতিঝিল স্টেশন হলো সবচেয়ে বেশি অফিসকেন্দ্রিক ব্যস্ত এলাকা।

দেশের প্রথম মেট্রো লাইনে এই দুই বিপরীতধর্মী এলাকাকে কেন যুক্ত করা হলো—জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হকের কাছে। তিনি মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পেরও উপদেষ্টা।

মেট্রোরেল

এই বিশেষজ্ঞ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উত্তরা থেকে আগারগাঁও হলো মেট্রোরেলের উত্তর করিডোর, যার এক প্রান্ত শুধুই আবাসিক এলাকা। উত্তরা, পল্লবী, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া; এগুলো পুরোপুরি আবাসিক এলাকা। এরপর শুরু হয়েছে অফিসপাড়া। আগারগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পল্টন ও মতিঝিল বিরাট বাণিজ্যিক ও অফিসকেন্দ্রিক এলাকা। এসব আবাসিক এলাকা থেকে ব্যস্ত সময়ে এখান থেকে প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস আসে। এই যাত্রীদের যদি উপরে উঠিয়ে (মেট্রোরেলে) নিয়ে আসা যায়, তাহলে বিরাট একটি জট কমবে। তাদের মেট্রোরেলে ওঠার আগ্রহ তখনই হবে, যখন তাদের গন্তব্যে অর্থাৎ মতিঝিল অথবা আশপাশের কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে পারবো।’

মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও চালু করা হয়েছে, এই অংশের কার্যক্রম দিয়েই পুরো মেট্রোরেলের সক্ষমতা যাচাই করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘উত্তরা থেকে আগারগাঁও এসে যখন অন্য একটি পরিবহনে তাকে যেতে হবে এটা একটা বিরাট অন্তরায় হবে। সে হিসেবে এখন খণ্ডিত অংশে মেট্রো চালিয়ে পরিচালনগত অসুবিধা নির্ণয় ও সমাধান করা যেতে পারে। পুরো দমে চলতে কোথায় পরিচালনগত, কোথায় এনফোর্সমেন্টের ঘাটতি হবে এবং যাত্রীদের নিতে স্টেশনের নিচে প্রচুর রাইড শেয়ার চালকরা আসবেন, তাদের কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে—সেই অভিজ্ঞতা হবে।’

ড. শামসুল হক

পৃথিবীর অনেক দেশের মেট্রোর শত বছরের অভিজ্ঞতা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি গত ৫০ বছরে দেখেছি, অভিভাবকরা সাধারণত স্কুলের কাছাকাছি বাসা নেয়। যাতে বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি স্কুলে নিতে পারে। স্কুলের পাশে বাড়ি ভাড়াই পাওয়া যায় না, এটাই হলো চাহিদা। একইভাবে মেট্রো স্টেশনের পাশে মানুষের থাকার আগ্রহ অনেক বেশি। যাদের দোতলা ছিল, তারা এখন ২০ তলা নির্মাণ করেছেন, ভাড়াটিয়াও পেয়েছেন। বিজ্ঞান বলে, মেট্রো স্টেশনকেন্দ্রিক সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন।’

তিনি জানান, মেট্রোরেলের কারণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের এলাকা বিরাট অংশে মানুষের বসবাস নেই সেখানে এখন মানুষ বসবাসে আগ্রহী হবেন।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেল লাইন বরাবর বিশেষ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ও উঁচু ভবন তৈরির অনুমতি দিলে সরকার ও জনগণ উভয়ই লাভবান হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ড. শামসুল হক বলেন, 'মেট্রো স্টেশনের পাশে আবাসন থাকলে পরিবহনের সময় ও খরচ দুটোই বেঁচে যায়। গাড়ি অতিরিক্ত রাখার আগ্রহ কমে যায়। ফলে রাস্তা বানানোর খরচ বেঁচে যায়। একে বলে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট। মেট্রোকেন্দ্রিক অফিস আদালত, মেট্রোকেন্দ্রিক সেবা ও আবাসিক এলাকা।’