উদ্বোধনের পরদিনই বন্ধ ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত গণশৌচাগার

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-সংলগ্ন একটি গণশৌচাগার উদ্বোধন করা হয়েছে গত বছরের ৩০ নভেম্বর। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে তা আজও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গণশৌচাগারটি কোনও কাজে আসছে না নগরবাসীর।

জানা গেছে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় গণশৌচাগারটি নির্মাণ করে ডিএসসিসি। অথচ গণশৌচাগারের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের।

প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, শৌচাগারটিতে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ব্লকে হাই কমোড, লো কমোড,  গোসলখানা, ইউরিনাল ও বেসিনসহ অন্যান্য সুবিধা আছে। প্রতিবন্ধীদের ওঠার জন্য আলাদা র‌্যাম্প করা হয়েছে।

গণশৌচাগারের আশপাশের দোকানদাররা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ এটি। আর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গণশৌচাগার পরিচালনার জন্য ইজারা দেওয়া হবে। এরপর এটি চালু করা হবে।

সরেজমিনে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার কফি হাউস গলিতে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের গণশৌচাগারটি কেঁচিগেটে তালাবদ্ধ। গণশৌচাগারটি দেখলেই বোঝা যায় নবনির্মিত, একেবারে ঝকঝকে-তকতকে। শৌচাগারের প্রবেশমুখে ঘুমাচ্ছে ভবঘুরে মানুষ। পাশেই লাগানো ফুলের চারা গাছগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। শৌচাগার বন্ধ থাকায় আশপাশে লোকজনের ভিড় ছিল না।

দরজার পাশে টাইলসের নামফলক বসানো। তাতে লেখা: ৩০ নভেম্বর ২০২১ শৌচাগারটি উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সহযোগিতায় ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তত্ত্বাবধানে ১৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার আ স ম ফেরদৌস আলম।

শৌচাগারের সাইনবোর্ড দেখে অনেকেই এলেও তাদের ফেরত যেতে দেখা যায়। কাউকে দায়িত্বশীল কারও খোঁজে আশপাশে তাকাতে দেখা যায়। এমন একজন নাহিদা রহমানের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, ‌‘আমি বাটা সিগন্যালে কেনাকাটা করতে আসি। সাইনবোর্ড দেখে শৌচাগারে আসি। এসে দেখি তালা দেওয়া। সাইনবোর্ডে দেখলাম উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধন করে আবার তালা দেওয়া এটা কেমন নিয়ম!’

গণশৌচাগারটির পাশেই পান-সিগারেট বিক্রি করেন মশিউর রহমান। শৌচাগার কখন খুলবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই টয়লেট তো বন্ধ। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শুধু উদ্বোধন করা হয়। এরপর এক দিনও চালু করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি পানি না থাকায় এটি বন্ধ আছে। এই গলিতে এক’শরও বেশি দোকান আছে। আমাদের প্রস্রাব-পায়খানা সারতে ঝামেলা পোহাতে হয়। আর পথচারী ও অন্যদের সমস্যাতো আছেই।’

উদ্বোধনের পরও শৌচাগার বন্ধ কেন, জানতে চাইলে ডিএসসিসির ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ স ম ফেরদৌস আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণশৌচাগারগুলো ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটি ইজারা হয়নি। আগামী সপ্তাহে পত্রিকার মাধ্যমে ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’

কাজ শেষ করার আগেই কেন উদ্বোধন করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইজারা না দিয়ে উদ্বোধন করা যাবে না, এ রকম বাঁধাধরা কোনও নিয়ম নেই। উদ্বোধনের পাশাপাশি ইজারাদারের প্রক্রিয়াটাও রাখা উচিত ছিল। যেদিন উদ্বোধন, তার পরদিন থেকেই স্টার্ট, এটাই নিয়ম। এটা প্রশাসনিক বিষয়, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার বিষয়।’

শৌচাগারের কাজ সব শেষে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানির সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আগামী মাসে এটি চালু হবে বলে আশা করেন কাউন্সিলর আ স ম ফেরদৌস আলম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্মাণকাজ শেষে পানির লাইন ও বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে সম্পত্তি বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন চলছে না, সম্পত্তি বিভাগ বলতে পারবে।’ তিনি জানান, পানি সরবরাহ লাইন সচল ছিল কিন্তু অকার্যকর হয়েছে কি না তার জানা নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।