‘হাজারটা ফুড কোর্ট বানানো যাবে, একটা বাহাদুর শাহ পার্ক নয়’

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করে অবিলম্বে ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সমস্ত উন্মুক্ত জায়গা দখল করে ফেলা হয়েছে, সমস্ত খোলা জায়গা বাণিজ্যিক মাফিয়াদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ছোট একটা মাঠ রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হয়। আর এই বাহাদুর শাহ পার্ক, যেটা বহু আগের ইতিহাসের অংশ, সেটাও এখন মুনাফাখোরদের ভয়ংকর রকম দৃষ্টির মধ্যে, তাদের আগ্রাসনের স্বীকার হতে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পার্ক শুধু পুরান ঢাকার মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না, সারা দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য এই প্রাণপ্রকৃতি, উন্মুক্ত স্থান, ইতিহাস ও বাহাদুর শাহ পার্ক রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম হচ্ছে, তা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আজ যদি বুড়িগঙ্গায় পানি থাকতো, ঢাকা শহরে গাছপালা ও উন্মুক্ত স্থান থাকতো, তাহলে শহরের মানুষের অসুখ-বিসুখ অর্ধেক নেমে যেত। রাজনৈতিক ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে দেশের মানুষের জন্য এই পার্ক রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।’

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, ‘হাজারটা ফুড কোর্ট বানানো যাবে কিন্তু একটা বাহাদুর শাহ পার্ক বানানো যাবে না। এখানে ব্যবসায়িক বান্ধব ফর্মুলা বাদ দেন। আপনারা এই পার্ক থেকে কুদৃষ্টি দূর করুন। যদি তা না হয়, তাহলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত ৬০টি সংগঠন নিয়ে আপনাদের প্রতিহত করা হবে।’

বক্তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘পার্ক পরিষ্কার রাখার জন্য যদি ইজারা দিতে হয়, তাহলে আপনি মেয়র সাহেব আছেন কী করতে! আপনার দায়িত্ব কী! ঢাকা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হচ্ছে শহরের মাঠ, উন্মুক্ত স্থান ও পার্কগুলো রক্ষা করা। সেটা না করে তারা আজ ইজারা দিচ্ছেন। তারা ইজারা দিলেও পেছনের দরজা দিয়ে বড় অঙ্কের টাকাপয়সার লেনদেন হচ্ছে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তরে এ ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কোনও যৌক্তিকতা নাই। এটি নির্মিত হলে এ ঐতিহাসিক স্থানের শুধু মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ হবে না, একই সঙ্গে এই এলাকার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও শরীরচর্চার একমাত্র স্থানটি বেদখল হয়ে যাবে। এ বিষয়টি কোনও বিবেকবান মানুষই মেনে নিতে পারে না।’

এ সময় সমাবেশে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তোফাজ্জল হোসেন, সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামান খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল সাত্তার সানাউল হক, আনোয়ার হোসেন, আতিকুল ইসলাম, কল্লোল মোস্তফা, মোশাহিদা সুলতানা, কৌশিক আহমেদ, আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাবু রাম সরকার, ড. মুশাহিদা সুলতানা, ড. হারুনুর রশিদ প্রমুখ।