শিক্ষা কার্যক্রমে ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে: মেয়র তাপস

‘প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ভূমিকম্পের মতো অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে শিক্ষা কার্যক্রমেই গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সমস্যার গভীরে যেতে হবে। হালকার ওপর দিয়ে হাঁটলে আর হবে না। আমাদের সব কর্তৃপক্ষের কাছে এখন পর্যাপ্ত যান-যন্ত্রপাতি দেওয়া আছে।’

শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস: প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

মেয়র বলেন, ‘দুর্যোগ হলে কোথা থেকে যান-যন্ত্রপাতি আসবে, সে জন্য আমাদের এখন আর বসে থাকতে হয় না। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এখন আমাদের করণীয় হবে, মূল সমস্যা অনুধাবন করে ঝুঁকি হ্রাসে শিক্ষা কার্যক্রমে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। সেভাবেই আমাদের পেশাজীবীদের তৈরি করতে হবে। দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন ও তদারকি করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।’

শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘যদি ভুল হয়, তাহলে সংশোধন করে দিয়েন। এ পর্যন্ত যত প্রকৌশলীকে (সিটি করপোরেশনে) নিয়োগের জন্য আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছেন, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পাঠ্যক্রমে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিশেষায়িত শিক্ষা। শুধু রাস্তা নির্মাণ, নর্দমা নির্মাণের সঙ্গে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এক জিনিস নয়।’

তাপস বলেন, ‘চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন আলাদা বিশেষজ্ঞ হয়, আমি মনে করি, প্রকৌশল শিক্ষায়ও তেমনি আলাদা বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত। শুধু মাস্টার্স পর্যায়ে নয়, বিএসসি শেষ করে যেহেতু পেশাজীবী হচ্ছেন, সুতরাং, বিএসসি পর্যায়েই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। (গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে) আমরা দেখি, কোনও স্ট্রাকচারাল সলিউশন প্রয়োজন হলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা সে জিনিসটা পাই না। ফলে আমাদের পরামর্শক নির্ভর হতে হয়। আমরা সবকিছুতেই পরামর্শক নির্ভর। একটা সেতু নির্মাণ করবো, পরামর্শক লাগবে। একটা চারতলা ভবন নির্মাণ করবো, পরামর্শক লাগবে!’

দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট নন, এমন অনেকেই ক্যামেরায় মুখ দেখাতে র্ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যান বলে মন্তব্য করে শেখ তাপস বলেন, ‘ঘটনা ঘটে গেলে দায়িত্ব কার ওপর দিয়ে পার পাওয়া যাবে, সেটা নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। দুর্যোগ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারে না। কারণ, উৎসুক মানুষ সেলফি তোলার জন্য ব্যস্ত থাকে। এটা (উদ্বারকাজ) কি ফায়ার সার্ভিস করবে? নাকি সিটি করপোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট, র্যা ব, পুলিশ করবে? এমনকি যাদের দায়িত্ব না, তারাও সেখানে হাজির হয়ে যান। যে কর্তৃপক্ষের সেখানে কোনও দায়িত্বই নেই, সে কর্তৃপক্ষও সেখানে হাজির হয়ে গেলেন।’

সেমিনারে বক্তারা বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি রোধে প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নগরে। ভবন নির্মাণে সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং ভবন নির্মাণে নীতিমালা মেনে চললে ভূমিকম্পে ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ ছাড়া সরকারের সব সংস্থার নজরদারি জোরদার করাও প্রয়োজন। ভবন মালিকরা সরকারকে সহযোগিতা করলে ভূমিকম্পের ক্ষতি কমানো সম্ভব। ভূমিকম্পের ওপর প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল নির্মাণে অবশ্যই ভূকম্পন সহনীয়ভাবে নির্মাণ করতে হবে।

সেমিনারে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড.মেহেদী আহমেদ আনসারি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।