‘দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক’

ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। কেবল একটা প্যাসেঞ্জার নামিয়ে এক টানে রওনা দিলেন সবুর মিয়া। সকালে গ্যারেজ থেকে বের হওয়ার সময় শুনেছেন,সাত মসজিদ রোডে কারা নাকি ইফতার করায়। কিন্তু জায়গা চেনেন না। আবাহনী মাঠ পার হয়ে আরও কিছু দূর সামনে এগিয়ে যেতে রাস্তায় সারি সারি রিকশা দাঁড়ানো দেখে আন্দাজ করেন এটাই সেই জায়গা। একপর তিনি হতবাক। রীতিমতো আয়োজন করে ইফতারের অপেক্ষা চলছে।

কাওরানবাজারে শুরুর দিন থেকেই এখানকার পেশাজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ ইফতার করেন এটিএন নিউজের সামনে এক টাকার আহারের আয়োজনে। শুক্রবার এক হাজার মানুষ ইফতার করেন এখানে। কেবল খাওয়া না এখানকার আয়োজনের বিশেষত্ব হলো রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন শিল্পী ইফতার তুলে দেন এবং একসঙ্গে এক কাতারে বসে ইফতার করেন। মোবেনা বেগম গত বছরও এখানে ইফতার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে আমরা ইফতার করি। পেট ভরে খাই। এখানে ইফতারের আয়োজন আছে জানার পরে বিকালে কাজ শেষ হলেও অপেক্ষা করি। ইফতার শেষে বাসায় ফিরি।’

রাজধানীজুড়ে এরকম নানা আয়োজন রয়েছে পথের মানুষদের ইফতার করানোর জন্য। প্রতি বছর মজার স্কুলের পক্ষ থেকে ইফতার করানো হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। এবার ইফতারের পাশাপাশি একদিন তারা আয়োজন করতে চলেছে উৎসবের। সে দিন শিশুদের গামছা, টুথব্রাশ, চিরুনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতার নানা উপকরণ দেওয়া হবে। এই শিশুরা পথে যেমন থাকে তেমনই স্কুলে আয়োজনে পড়ালেখাও করে।

পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের ট্রেজারার সাজিদ রহমান অভিক শোনান শুরুর গল্পটা, ‘আমরা কোভিডের সময় আমজনতার হোটেল শুরু করি। নিম্নআয়ের মানুষেরা যেন খেতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়। শুরুতে অর্থনীতি বিভাগের চার বন্ধু মিলে উদ্যোগটা নিই। ইফতার ও সেহরির আয়োজন করি ২০২১ সাল থেকে। মূলত রিকশাচালক ও পথচারীরা এখানে খেতে আসেন এবং তারা কেউ চাইলে কিছু টাকা দিয়ে খেতে পারেন, চাইলে বিনামূল্যেও খাবার নিতে পারেন। সেহরি ও ইফতার মিলিয়ে প্রতি দিন হাজারের কাছাকাছি মানুষকে খাবার দেওয়া হয়। খাবারের মেন্যুতে ইফতারের বিভিন্ন নিয়মিত খাদ্য ছাড়াও ডিম-খিচুড়ি, বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকে। দেশ বিদেশ থেকে নানা মানুষের পাঠানো অর্থসহায়তা আমাদের মূল চালিকাশক্তি।

কাওরানবাজারে মিডিয়া পাড়ায় আয়োজন হয় ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ এর ইফতার। করোনাকালে ইফতারের সময় ‘নো মাস্ক নো ইফতার’ থেকে শুরু হয় এই উদ্যোগ। ইফতার পেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এরপর এই উদ্যোগে যুক্ত হয় এবারের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সংগঠন বিদ্যানন্দ। উদ্যোগ বিষয়ে এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পথে বসে আনন্দে খাওয়ার ব্যাপারটা আছে। আমরা প্রতিদিন হাজারের বেশি ইফতার আয়োজন করি। ভাগাভাগি করে খাই। দেশের নানা স্থান থেকে যুক্ত হতে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যুক্ত হন সেলিব্রিটিরা। তারা আদর করে হাতে তুলে খাওয়ায়। এটা অন্যরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা থেকে বিদ্যানন্দকে সঙ্গে নিয়ে এটি এগিয়ে চলেছে।’