সিলেটের ভাগাড় হয়ে পড়েছে সুরমা

গত বছর সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন প্রায় ৫৪ টনের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। আর এসবই গিয়ে পড়ছে সুরমায়। তাই দিনে দিনে সিলেটের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে নদীটি।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর ‘দা প্লাস্টিক ডেলিউজ: ইন দ্য সিলেট সিটি করপোরেশন এরিয়া, বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তথ্যটি উঠে এসেছে।

এসটিইপিপি (সাসটেইনেবল ট্রানজিশনস টু এন্ড প্লাস্টিক পলিউশন) প্রজেক্টের অধীনে এসডো এবং ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়তা করবে। টেকসই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো উৎস থেকে বর্জ্য পৃথকীকরণ। এই ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ।’

এ গবেষণায় দেখা গেছে, উৎপাদিত সব বর্জ্যের মধ্যে ৬৭ ভাগ জৈব বর্জ্য। এ ছাড়া ১৭ ভাগ প্লাস্টিক, ৩৭ ভাগ ই-বর্জ্য, ২ ভাগ মেডিক্যাল এবং ১ ভাগ অন্যান্য বর্জ্য। পলিমার দিয়ে তৈরি নিরাপত্তা পণ্যের অব্যবস্থাপনাই মূলত সিলেট শহরে প্লাস্টিক দূষণ বাড়িয়েছে বলে জানানো হয়।

গবেষণায় প্লাস্টিক বর্জ্যের তালিকায় উঠে এসেছে পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, ব্যক্তিগত পণ্য, মিনি প্যাক, খাবারের প্যাকেট, ওয়ানটাইম থালা-চামচ-মগ, জুতা, ঝুড়ি, ব্যারেল, প্লাস্টিকের আসবাব, পিভিসি ফিটিংস, ব্যানার, ফেস্টুন ও খেলনা। এসবই মূলত একবার ব্যবহারযোগ্য, যা মোট প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৭৮ শতাংশ।

আরও দেখা গেছে, ২০২০-২০২১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে ১৮ টন।

এসডো’র চেয়ারপারসন সৈয়দ মারঘুব মোর্শেদ বলেন, সরকারকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য, বিশেষ করে পলিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সিলেটের সব পর্যটন স্থানে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও তদারকির জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং রেভল্যুশন প্লাস্টিকস-এর ডেপুটি লিড ক্রেসিডা বাউয়ারের মতে, ‘গবেষণাটি থেকে বোঝা যায় যে সিলেটে উন্মুক্ত স্থানে যথেচ্ছভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয়। খোলা জায়গায় ময়লা ফেলার প্রচলনের কারণেই স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণজনিত বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে চলেছে। ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি—দুটোই এর দ্বারা ভয়াবহভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এতে বোঝা যায় বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টেকসই নয়।’

এসডো’র মহাসচিব এবং এই গবেষণার টিম লিডার ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি। জিরো ওয়েস্ট পরিকল্পনার এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব। সম্প্রতি প্রকাশিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনে উৎস থেকে বর্জ্য আলাদা করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আলাদা বিন থাকা জরুরি এবং এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা।

অন্যদের মধ্যে এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, সিলেট বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করছে। এখানকার সুরমা নদী কুশিয়ারার সঙ্গে মিশে মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। বর্জ্যগুলোও নদীর সঙ্গে সাগরে গিয়ে পড়ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে নদী ও সাগরের জলজ বাস্তুসংস্থান। অনেক হাওরও এতে দূষিত হচ্ছে বলে জানানো হয়।