এমন শ্রাবণ কখনও আসেনি

গত দুই দশকে এমন শ্রাবণ, এমন বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল দেখা যায়নি। ঋতু বিশ্লেষণ বলছে, আষাঢ় ও শ্রাবণ; এই দুই মাস বর্ষাকাল। তবে বাংলাদেশে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টি থাকে। আর সবচেয়ে ভারী বৃষ্টি হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডারের জুলাই মাসে, বাংলা মাস শ্রাবণের শুরুতেই। এবার ভিন্নরূপ দেখিয়েছে শ্রাবণ, বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। গত দুই দশকেও এধরনের বৃষ্টিহীন বর্ষা দেখা যায়নি।

পঞ্জিকায় আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণেরও অর্ধেক শেষ; অথচ বর্ষার এই ভরা মৌসুমে বইছে প্রচণ্ড তাপদাহ, নেই বৃষ্টির দেখা। বিগত কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আছে। আকাশে শরৎ ও হেমন্ত কালের মতো বিক্ষিপ্ত মেঘের আনাগোনা এবং একই সাথে তীব্র খরতাপ। ফলে ভরা বর্ষাকালেও বাংলাদেশের মানুষকে ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে।

৬৬ শতাংশ বৃষ্টি কম

শ্রাবণে এমন বৃষ্টিহীন কখনও দেখেছেন কিনা প্রশ্নে আবহাওয়াবিদ ড. মো আবুল কালাম মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাধারণত প্রতিবছর জুলাই মাসেই বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। ২০০০ থেকে ২০২২ সালের বৃষ্টির হিসাব যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে বলতে হয়, এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৬ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এটা অবশ্যই ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। সারা পৃথিবীতেই একটু ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জুলাইতে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেটা অনেক কম হয়ে গেছে। বর্ষাকালটা বর্ষার মতো হয়নি। যদি ঢাকার কথা বলি, রেগুলার এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু বর্ষায় আমাদের এখানে টানা ১১ দিন বৃষ্টির রেকর্ড আছে। এবার সেরকম দেখা গেল না। আগামী সপ্তাহেও এরকমই যাবে। অল্পস্বল্প বৃষ্টির দেখা মিলবে, টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে সংকট

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই বৃষ্টিহীনতার কারণ মানবসৃষ্ট। এমনকি অন্যদেশের সাথে আমাদের দেশের বৃষ্টির যে যোগাযোগ সেটিও এই ব্যত্যয়ের বড় কারণ। এদিকে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র রোদে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের কৃষি খাত। উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার আবাদি জমি এর মধ্যে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে জলমগ্ন জমিতে আমনের চারা বুনলেও এবারে বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই।

মৌসুমী অসুখে ভোগান্তি বেশি

সপ্তাহখানেক আগে জ্বর-সর্দির সঙ্গে কাশি শুরু হয় রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়া নিবাসী রেজওয়ানের। দুদিন পর স্ত্রী ও সন্তানেরও জ্বর। করোনাভাইরাস মহামারি আর ডেঙ্গুর প্রকোপের কথা ভেবে চিকিৎসক দুটো টেস্ট দিলেন। দুটোই নেগেটিভ। কয়দিন পরে জ্বর সেরে গেলেও ঠাণ্ডা লেগে বুকে কফ জমে যাওয়া সারে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, এখন বেশি বেশি তরল খাবার ও ফলমূল ছাড়া চিকিৎসা নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবার বর্ষা শুরু পরেও গরম না কমার কারণে এবং প্রচণ্ড তাপে শরীর পানিশূন্য হয়ে যাওয়াও জ্বর, শরীর ব্যাথার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই আসছেন। সাধারণত বর্ষার পরে শরতের শেষে এসে গরম বেড়ে যাওয়ায় পরে জ্বর, সর্দি, কাশি বাড়তে দেখা যায়। এবার পুরো সময়েই এই ধরনের রোগী বেশি। হাসপাতালে এখন চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ৮০ শতাংশই আসছে জ্বর, সর্দি, কাশির সমস্যা নিয়ে।

শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাকিবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশুদের জন্য গরমে একটু বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ঠাণ্ডাটা তারা নিজেরা ম্যানেজ করতে পারে না বলে ভোগান্তি বেশি হয়।

তাহলে বৃষ্টি কবে হবে?

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনের মতো রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া ও সিলেটসহ কয়েকটি জেলার ওপর তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে সারাদেশে যে তীব্র গরম পড়েছে সেটা হালকা বা মাঝারি বৃষ্টিপাত কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ভারী বৃষ্টি। তবে রবিবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত দেশের কোনও অংশেই ভারী বৃষ্টিপাতের কোনও আভাস দেখা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ ড. মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিনের এক পশলা বৃষ্টি, হয়তো কোনও কোনও দিন দুই পশলা হতে পারে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনার পূর্বাভাস আমরা দিতে পারছি না।