ইটবিহীন অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি কতদূর?

মাটির উপরিভাগ বা টপ সয়েল একদিনে তৈরি হয় না। বছরের পর বছর ধরে রূপান্তরের মাধ্যমে এটি তৈরি হয়। মূলত ফসল উৎপাদনের জন্য এই জমি ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু ইটভাটাগুলোতে জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তা পুড়িয়ে ইট বানানো হয়। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান উপাদানই হচ্ছে ইট। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে টপ সয়েল কাটা হ্রাস করে ইটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্লক দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণের প্রচলন করতে যাচ্ছে। কিন্তু ইট ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণে কতটা প্রস্তুত আমরা?

২০২৫ সালের মধ্যে ব্লক দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণের প্রচলন করার পরিকল্পনা থাকলেও আর সময় আছে মাত্র দুই বছর। কিন্তু এখনও ঢাকায় যত বাড়িঘর হচ্ছে তার সবখানে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনও ঢাকার সাভার, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় হাজার হাজার ইটভাটা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ড্রাম চিমনির ভাটাসহ দেশে বর্তমানে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৭০০টি। যার প্রায় ৫০ ভাগই অবৈধ। এসব ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ইটভাটাই নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, গ্রামগঞ্জ, শহর বন্দরের কাছাকাছি জায়গায়, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে, পাহাড়ের পাদদেশে। ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত হয় প্রচুর কালো ধোঁয়া। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এজন্য সরকার পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে। ওই নির্দেশনায়, ২০২০ সালের মধ্যে ১০ ভাগ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২০ ভাগ, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩০ ভাগ, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬০ ভাগ, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৮০ ভাগ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে শতভাগ ব্লক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকারি অবকাঠামো খাতে এই ব্লক খুব একটা ব্যবহার হচ্ছে না। আগের মতোই পোড়ামাটির ইট ব্যবহার হচ্ছে।

সাধারণত ৭০ শতাংশ বালু এবং ৩০ শতাংশ সিমেন্টের সংমিশ্রণে ব্লক তৈরি করা হয়। সিলেটের মোটাবালি ১০ শতাংশ এবং নদী থেকে তোলা বালি ৬০ শতাংশ ব্লকে ব্যবহার করা হয়। ব্লকের ওজন কম হওয়াতে এটি ভবন নির্মাণের জন্য ভালো। ব্লক দিয়ে বাড়ি বানালে খরচও ৪০ শতাংশ কম হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ইটভাটা যতদিন বন্ধ না হচ্ছে ততদিনে বায়ুদূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। বায়ুদূষণের একটি বড় উৎস ইটভাটা। তিনি বলেন, ব্লক ইটের কথা সরকার বললেও বাস্তবে এটি আলোর মুখ দেখেনি। যত দ্রুত সম্ভব আধুনিক পদ্ধতির ইটভাটা অথবা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

পরিবেশ অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা তো আইন করেছি। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইন সংশোধনেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরাও চাই ইটের বিকল্প কিছু করা হোক। কিন্তু বাস্তবে সেটি এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কেউ কেউ ব্লক ইট ব্যবহার করলেও সেটি অপর্যাপ্ত।