সাগরে যাচ্ছে ২.৬ মিলিয়ন টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য

ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ১৮টি আন্তসীমান্ত নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রবেশ করে। এর মধ্য থেকে ২ হাজার ৫১৯ টন ভারত থেকে এবং ২৮৪ টন মিয়ানমার থেকে আসে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) সাম্প্রতিক একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে।

রবিবার (২০ নভেম্বর) এসডো আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় গবেষণার এই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

প্লাস্টিক সল্যুশনস ফান্ড ও গ্লোবাল অ্যালাসেন্স ফর ইনসিনেরেশন অল্টারনেটিভস-গায়ার সহযোগিতায় এসডো এই গবেষণাটি পরিচালিত করে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বিপজ্জনক প্লাস্টিক বর্জ্যের আন্তসীমান্ত চলাচল হ্রাস করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত অগ্রসর করার জন্য সরকার ও নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে পরামর্শ করা।

গবেষণার প্রধান ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এসডো’র গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাদের দেশের জলজ ব্যবস্থায়, বিশেষ করে আন্তসীমান্তে প্লাস্টিক দূষণের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা। এই গবেষণা বাংলাদেশের নদী বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

ডিসেম্বর ২০২০ থেকে জুলাই ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৭ হাজার ২০ জনের সঙ্গে জরিপ করা হয়। দেশের বিভিন্ন আন্তসীমান্ত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১১ হাজার ৭০০ ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশের যে সব আন্তসীমান্ত নদীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আপস্ট্রিমের ক্ষেত্রে মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা; মিডস্ট্রিমের ক্ষেত্রে গঙ্গা এবং ডাউনস্ট্রিমের ক্ষেত্রে ইছামতি-কালিন্দি ও নাফ নদী।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা ছাড়াও অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে ছিল সংলাপ। এর মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদ (ইউএনইএ) রেজোল্যুশন ৫/১৪: অ্যাণ্ড প্লাস্টিক পলিউশন: টুওয়ার্ডস অ্যান ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যালি বাইন্ডিং ট্রিটি’।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডো’র চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নদীগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নদী এবং এর জন্য আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া ও দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। আসন্ন প্লাস্টিক চুক্তি আমাদের এ কাজে সাহায্য করবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। কিন্তু এই নদীই এখন হুমকির মুখে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যা কখনই পঁচে না– আমাদের নদীগুলো ধ্বংসের জন্য দায়ী। আমরা আশাবাদী, সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-বিইউপি’র অ্যাডজান্ট ফ্যাকাল্টি (সমাজ-বিজ্ঞান) ড. মাহফুজুল হক বলেন, নদী রক্ষার্থে শুধু সরকারের একা কাজ করলে চলবে না। আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও যে সব দেশ থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকগুলো ভেসে আসছে, সে সসব দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে– একটি সঠিক সমাধানের জন্য।