‘অত দেইখেন না, চোখে টিনের চশমা পরেন’

বুধবার সকাল পৌনে ১১টা। রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার কর্ণগোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোনও ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। মিনিট দশেক বাইরে অবস্থান করে ভোটকেন্দ্রের বুথে প্রবেশের সময়ে হঠাৎ করে শোরগোল। কারণ মেয়র প্রার্থী হাসিনা গাজী একটি গাড়ি থেকে নেমেছেন। মুহূর্তের মধ্যে কেন্দ্রের আশেপাশে থাকা শ খানেক যুবককে লাইন ধরানো হলো। মেয়র প্রার্থী সানগ্লাস পরে বুথে প্রবেশ করলেন। ফটো সেশনের জন্য সাংবাদিকদের সামনে পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলো। বিএনপিবিহীন অন্য এজেন্টদের সুন্দর জবাব ‘ভালো।’

তবে মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতেই ঘটলো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কারণ কিছুক্ষণ আগে যাদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল তাদেরকে দেখা গেল ব্যালট নিয়ে নিজের ইচ্ছেমত সিল মারতে। উৎসুক সাংবাদিকেরাও আগ্রহ নিয়ে বুথে প্রবেশ করার পরে তাদের হাতেও দেওয়া হয় ব্যালট পেপার। প্রার্থীর সঙ্গে থাকা লোকজনদের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘ইচ্ছে হলো মারতে পারো।’

তারবতে বিএনপি প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

কিছুক্ষণ পর পাঞ্জাবি পরিহিত প্রিজাইডিং অফিসার এ দৃশ্য দেখে ‘নাউবুল্লিাহ’ বলে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেন। মাত্র ১০ মিনিটে ভরে যায় ৫টি ব্যালট বাক্স যেখানে সবগুলোতে নৌকার ওপরেই ছিল সিল।

পরে কথা বলার চেষ্টা করা হয় প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে। কিন্তু তিনি কোনও কথা বলতে এমনকি নিজের পরিচয় দিতেও রাজি হননি। প্রায় আধাঘণ্টা মেয়র প্রার্থী অবস্থান করে যখন চলে যান ততক্ষণে এ কেন্দ্রের নৌকার জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পেছনে ছুটে চলতে থাকে ওইসব লোকজনও।

বিষয়টি নিয়ে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের লোকজন একটু কঠোর ভাষায় উত্তর দেন, ‘অত দেইখেন না। চোখে টিনের চশমা পরেন।’

দুপুর দেড়টার ঘটনা। মাসাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও চলে প্রকাশ্য ভোট কারচুপি। আওয়ামী লীগের লোকজন ব্যাজ পরে তাদের অনুগামীদের সুযোগ করে দিচ্ছিলো কেন্দ্রে প্রবেশের। সঙ্গে করে নিয়ে যায় বুথে। একসঙ্গে ২০-২৫টি ব্যালট ছিঁড়ে দিয়ে দেয় হাতে। ইচ্ছেমতো সিল পড়ে নৌকাতে।

একটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,নৌকা জিতবে তাই অন্যদের এত কষ্ট করে লাভ কী।

যদিও সকালেই কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নাসিরউদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ভূইয়া। তাদের মধ্যে নাসির দুপুর সোয়া ২টায় অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীনদের কারণে তারা নির্বাচনে থাকতে পারেনি।

/এএ/