নাম বদলালে আবার আকিকা দিতে হবে?

কারও প্রদত্ত নাম যদি অসুন্দর হয় তবে সেটা পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা হলে আকিকার প্রয়োজন নেই। বরং অর্থহীন ও অসুন্দর নাম বদলে সুন্দর নাম রাখা সুন্নাহসম্মত কাজ। মহানবী (সা.) নারী-পুরুষ বিভিন্ন সাহাবির নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন আকিকা করেছেন—এমন প্রমাণ নেই। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৮৩৯)

আকিকা করতে হয় কেন?

নাম বদলালে আবার আকিকা দিতে হয়, সমাজে এ কথার প্রচলন আছে। এটা ভুল ধারণা। নবজাতক যেন আল্লাহর রহমতে বিশেষ এই সদকার মাধ্যমে সব ধরনের বিপদ থেকে নিরাপদে থাকে এজন্য ইসলামে আকিকার বিধান দেওয়া হয়েছে। নাম পরিবর্তনের জন্য নয়।

কখন আকিকা দিতে হবে?

সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। রাসুল (সা.) তাঁর প্রিয় দুই দৌহিত্র হাসান-হুসাইন (রা.)-এর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করেছেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৬৬৯)। তবে পরেও আকিকা দেওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় আছে—আকিকা করা এবং সপ্তম দিনে করা। সপ্তম দিনে না করলে একটি আমল ছুটে যাবে। কিন্তু মূল আমল আকিকা তাতে রহিত হয় না। 

আকিকা কি দিতেই হবে, কীভাবে দেবে?

জুমহুর তথা অধিকাংশ ফিকাহবিদের মতে-আকিকা মুস্তাহাব একটি আমল। এটি পালনে বাধ্য করা হয়নি, বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। এক্ষেত্রে ছেলের জন্য সম-মানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৯৬১) তবে ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিলেও মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (কিফায়াতুল মুফতি: ৮/২৪৪) বকরির অনুরূপ গরু, মহিষ, উট ইত্যাদির মাধ্যমেও আকিকা সহিহ হবে। কোরবানির মতো একাধিক শরিকে এক পশু দিয়েও আকিকা দেওয়া যাবে। এমনকি একই জন্তুতে কোরবানি ও আকিকা একইসঙ্গে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আকিকার গোশত কে খাবে?

আকিকার গোশতের বিধান কোরবানির গোশতের মতই। যার নামে আকিকা করা হয়েছে সে ও তার পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনরা তা খেতে পারবেন। রান্নাকরা এবং কাঁচা দু’ভাবেই সর্বস্তরের মানুষকে আকিকার গোশত হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৬৬৯) তবে এক্ষেত্রে সদকা করাটা বাধ্যতামূলক নয়, মুস্তাহাব। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৬/৩৩৬)

সুন্দর নাম রাখার বিষয়ে ইসলাম

নাম রাখার ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। হাশরের মাঠে আল্লাহর সব সৃষ্টিকে নাম ধরে ডাকা হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, “রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে-হে অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখো।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস: ৪৯৪৮)।”

তথ্য সহায়তা: দারুল উলুম দেওবন্দের উর্দু ওয়েবসাইটের ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৭ নম্বর ফতোয়া এবং জামিয়া ইসলামিয়া আল্লামা ইউসুফ বানুরি টাউনের উর্দু ওয়েবসাইটের ফতোয়া।

লেখক: শিক্ষক-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ ঢাকা।