ইমানবিহীন সৎকর্ম মূল্যহীন

জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয় মুমিনের মূল্যবান মৌলিক বিশ্বাস। জান্নাতপ্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য তাই মুমিন বান্দারা সৎকর্ম করে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী। এ কথা অকাট্য সত্য যে ইমানবিহীন সৎকর্ম আল্লাহ তাআলার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু শয়তান সব সময় আল্লাহর অবাধ্যতার প্ররোচনা দিয়ে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকে। তাই দয়াময় আল্লাহ তাআলা সতত শয়তানের ব্যাপারে বান্দাদের সতর্ক করেন।

‘(অভিশপ্ত শয়তান) তাদের (নানা) প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের (সামনে) মিথ্যা বাসনার (মায়াজাল) সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয়, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।' (আন্-নিসা: ১২০)

শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সিরাতল মুস্তাকিম, অর্থাৎ সরল পথ থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়ে যায়। তখন সে ভালো-মন্দ বোঝার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তার বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়। আল্লাহকে ভুলে শয়তানের পথ অবলম্বন করে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। একসময় তার জীবনে নেমে আসে অশুভ অন্ধকার। তখন সে ডুবে যায় পাপের পঙ্কিলতায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে বলেন, 'এরাই হচ্ছে সেসব (হতভাগ্য) ব্যক্তি; যাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, যার (আজাব) থেকে মুক্তির কোনও পন্থাই তারা (খুঁজে) পাবে না।' (আন্-নিসা: ১২১)

'অন্যদিকে যারা (শয়তানের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে) আল্লাহ তায়ালার ওপর ইমান আনবে এবং ভালো কাজ করবে, তাদের আমি অচিরেই এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার তলদেশ দিয়ে ঝরনাধারা বইতে থাকবে, তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে; আল্লাহর ওয়াদা সত্য; আর আল্লাহর চেয়ে বেশি সত্য কথা কে বলতে পারে? (আন্-নিসা: ১২২)

মুমিনের বন্ধু রাহমানুর রাহিম কোরআন মাজিদে আলোর হাতছানি দিয়ে বলেন, '(পক্ষান্তরে) যে ব্যক্তি কোনও ভালো কাজ করবে, নর কিংবা নারী, সে যদি ইমানদার অবস্থায়ই তা (সম্পাদন) করে, তাহলে (সে এবং তার মতো) সব লোক অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, (পুরস্কার দেওয়ার সময়) তাদের ওপর বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবে না। (আন্-নিসা: ১২৪)

গুনাহর সাগরে হাবুডুবু খাওয়া হতাশ বান্দাদের প্রতি আশাজাগানিয়া আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' (সুরা জুমার-৫৩)।

মহান রাব্বুল আলামিন তার হাবিবকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন গুনাহগার বান্দাদের পাশে হেদায়েতের আলো জ্বালিয়ে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তাদের আল্লাহর পথে অগ্রসর করার সুসংবাদ নিয়ে।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালালো; ফলে পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগলো। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগলো। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।' (মুসলিম: ৫৮৫২)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, 'হে মানুষ, আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে তোমাদের জন্য সঠিক (বিধান) নিয়ে রাসুল এসেছে, যদি (তার আনা এ বিধানের ওপর) তোমরা ইমান আনো, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ (রয়েছে), আর তোমরা যদি তা মেনে নিতে অস্বীকার করো, তাহলে (জেনে রেখো) এই আসমান-জমিনের সর্বত্র (যেখানে) যা কিছু আছে তার সবকিছুই আল্লাহ তাআলার জন্য এবং আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ, কুশলী। (আন্-নিসা: ১৭০)

অবাধ্য মানুষ যখন দ্বীনের পবিত্র দাওয়াতকে অবজ্ঞা করে এমনকি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করতে দ্বিধা করে না, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার হাবিবকে নির্দেশনা দেন যে 'তুমি কেবল এমন লোককেই সতর্ক করতে পারো যে (আমার) উপদেশ মেনে চলে এবং (সে অনুযায়ী) দয়াময় আল্লাহ তাআলাকে না দেখে ভয় করে, (হ্যাঁ, যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে) তাকে তুমি ক্ষমা ও মহা প্রতিদানের সুসংবাদ দান করো।' (ইয়া-সিন: ১১)

লেখক: সাংবাদিক