বদলি হজ কী, নারী কি পুরুষের বদলি হজ আদায় করতে পারবে?

কোনও মুসলিম যদি সম্পদশালী ও শারীরিকভাবে সক্ষম হন, তাহলে জীবনে একবার তার ওপর পবিত্র হজ আদায় করা ফরজ। কারও ওপর হজ ফরজ হওয়ার পর সে যদি হজের সময় পায়, কিন্তু এমন কোনও ওজর বা প্রতিবন্ধকতা এসে যায়, যার কারণে সে নিজে গিয়ে হজ করার সক্ষমতা না রাখে কিংবা এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে, যা থেকে আর সুস্থ হওয়ার আশা নেই, তখন তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে বদলি হজ করানোর সুযোগ রেখেছে ইসলাম। অথবা হজ ফরজ হওয়া ব্যক্তি যদি মারা যান, তাহলে মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার নামে বদলি হজ করানোর অসিয়ত করে যাওয়া তার জন্য ফরজ। এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত যে হজের বিধান বর্ণনা করা হলো, সেটিই বদলি হজ।

কিন্তু যদি এমন হয়, বদলি হজ করানোর পর যার জন্য হজ করানো হলো, তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন, অথবা যে সমস্যার কারণে বদলি হজ করানো হয়েছে, তা কেটে গেলো, তাহলে আবার স্বয়ং তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ হয়ে যাবে। আর আগের বদলি হজটি তার নফল হজ হিসেবে গণ্য হবে। (আহকামে হজ: ১১৮)

নারী কি পুরুষের বদলি হজ আদায় করতে পারবে?

নারীরা পুরুষের পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বিদায় হজে খাছআম গোত্রের একজন নারী রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার বাবার ওপর হজ ফরজ হয়েছে, কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারবো?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। (তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারবে)।’ (সহিহ বুখারি ১/২০৫)

পুরুষ কি নারীর বদলি হজ আদায় করতে পারবে?

নারী যেমন পুরুষের বদলি হজ আদায় করতে পারে, ঠিক তেমনই পুরুষও নারীর পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করতে পারবেন। একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, জুহায়না গোত্রের এক নারী রাসুল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার মা হজের মানত করেছিলেন, কিন্তু তা আদায় করার আগেই তিনি মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করবো?’ রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে তুমি হজ করবে। যদি তার কোনও ঋণ থাকে, তবে কি তুমি তার ঋণ পরিশোধ করতে না? সুতরাং আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। কেননা, আল্লাহ তায়অলাই পাওনা পাওয়ার সর্বাধিক হকদার।’ (বুখারি শরিফ)

তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনও নারী যখন কোনও পুরুষের পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করবেন, তখনও তার ওপর আবশ্যক হলো, কোনও মাহরামের সঙ্গে হজের সফরে বের হওয়। কারণ মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজের সফর করা জায়েজ নেই।

তথ্যসূত্র: আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭ ও আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৩

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষক, মারকাযুল হুদা মাদ্রাসা, ঢাকা।