১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা বলেন, প্রথম কয়েক ধাপের নির্বাচনে যে অনিয়ম-সহিংসতা হয়েছে, এ নিয়ে আমাদের অবস্থান ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে। যে কয়টি ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যে অনিয়ম ও সহিংসতার চিত্র ফুটে উঠেছে, তার একটি নেতিবাচক প্রভাব পুরো রাজনীতিতে পড়বে। এ ধরনের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে সুদূর প্রসারী ক্ষতি হলো রাজনীতির। জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দলগুলোর নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ভোট কাটাকাটি ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় চলছে, তাতে আওয়ামী লীগ খুশি হলেও জোটের শরিক হিসেবে তারা অস্বস্তিতে পড়েছেন। শরিক দলের নেতারা বলেন, এতে নির্বাচনি ব্যবস্থা নষ্ট হতে চলেছে। এ ধরনের নির্বাচন দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটি সরকারের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে এ ধরনের দাবির পেছনে যৌক্তিকতা পোক্ত হতে শুরু করেছে বলেও মনে করেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জিততে হবে—এমন মনোভাব কেন গড়ে উঠেছে দলটির ভেতরে, আমরা জানি না। এই নেতারা আরও বলেন, সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের সব ইউনিয়নে হারলেই বা এমন কী ক্ষতি হতো? এখন জিতেই বা কী লাভ হবে? এটা আমাদের বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন পদ্ধতিটাই নষ্ট করে ফেলেছে দাবি করে জাসদের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, আমরা যদিও আওয়ামী লীগের শরিক, তবু নির্বাচন পদ্ধতি নষ্ট করার দায়-দায়িত্ব আমরা নেব না।
গণতন্ত্রী পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেসব অনিয়ম চলছে, তাতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে শক্তিশালী করে তুলছে। একারণে আমরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’।
আরও পড়তে পারেন: চার জেলায় নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত ৫
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, অনিয়ম-সহিংসতা ও সরকারি দলের প্রার্থীদের ভোট কাটাকাটি করে বিজয় ছিনিয়ে আনার যে চর্চা শুরু হয়েছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সুদূর প্রসারী ক্ষতি হলো। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। এ জন্য অবশ্য তিনি নির্বাচন কমিশনকেও দায়ী করেন। বাদশা বলেন, আমরা ইসির সঙ্গে তিনবার দেখা করে ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছি। ইসি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যেসব ব্যর্থতা সামনে এসেছে, তার দায়-দায়িত্ব শরিক দল হিসেবে আমরা নেব না।
জাসদ (আম্বিয়া) গ্রুপের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম-সহিংসতায় মানুষের মধ্যে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাশুল সবাইকে দিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ থেকে বের হয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম-সহিংসতার অভিযোগ যে কারও থাকতেই পারে। নির্বাচনের ভুলত্রুটি কারও চোখে ধরা পড়লে তা তুলে ধরতেই পারেন। তবে আওয়ামী লীগ মনে করে, অতীতের চেয়ে একেবারেই অল্প-সংখ্যক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর এগুলোও পর্যায়ক্রমে কমে এসেছে।
আরও পড়তে পারেন: নির্বাচনি সহিংসতায় ফেনীতে গুলিবিদ্ধ ৯, প্রার্থী আহত
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, যেভাবে ইউপি নির্বাচনগুলো হচ্ছে, তাতে নির্বাচনি সিস্টেম লস করছে। এতে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্কোন্দল বেড়েছে। ভবিষ্যতে খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ফেল করেছে। কমিশনের বহু দুর্বলতা রয়েছে। এ জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ইউপি নির্বাচনকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আর কী বলব? বেশি কিছু বলতে গেলে জামেলা আছে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, গত দুধাপের চেয়ে পরের দুই ধাপের নির্বাচন অনেকখানি সুষ্ঠু হয়েছে। সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। এ জন্য ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
/এমএনএইচ/