শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে তরুণরা উজ্জীবিত, প্রবীণরা হতাশ

আওয়ামী লীগআওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা-কল্পনা চলছে, কারা নেতৃত্ব পাচ্ছেন নতুন কমিটিতে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা সত্যি ধরে নিয়ে তরুণ নেতারা অনেকটাই আশাবাদী। অন্যদিকে পদ হারানোর ভয় ঢুকেছে অনেক প্রবীণ নেতার মধ্যে।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা হয়। সম্মেলন উপলক্ষে চার বছর পর জাতীয় কমিটির ওই সভা হয়। সভা সূত্রে জানা যায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের অন্তত পাঁচ জ্যেষ্ঠ নেতাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কতদিনের? সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কত বছর বয়সে?’ সবার উত্তর শুনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা এত তরুণ বয়সে নেতা হয়েছেন! এবার তরুণরাই নেতা হোক, কী বলেন? তাছাড়া এখনই তো চারা গাছ রোপনের সময়।’
দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে অনেক প্রবীণ নেতা হতাশ হয়েছেন। শেখ হাসিনার এমন ‘অপ্রত্যাশিত’ প্রশ্ন কেউ আশা করেননি। এ কারণে অনেক প্রবীণ নেতার মধ্যে নেতৃত্ব হারানোর ভয় ঢুকেছে। অন্যদিকে তরুণ রাজনীতিকদের নেতা হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলেছে শেখ হাসিনার এ বক্তব্য।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর জাতীয় কমিটির সভাশেষে প্রবীণ নেতারা একে অপরের সঙ্গে হতাশার কথাও ব্যক্ত করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মর্মার্থ খুঁজতেও শুরু করেন। আর শেখ হাসিনার এই বার্তা পদ-প্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে পৌঁছা মাত্রই তাদের ভেতরে উৎসাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও সহ-সম্পাদকদের ভেতরে। ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তরুণদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন, তখন তাকে বিদায় জানাতে গণভবনে তরুণ নেতাদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো। গণভবনের একটি সূত্র জানায়, গত সাড়ে সাত বছরে যারা একবারও গণভবনে আসেনি, তারাও এদিন আসেন।
এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে তাদের রাজনৈতিক বয়স জিজ্ঞাসা করেছেন। তখন এটাও বলেছেন, এবার তরুণরাই নেতৃত্বে আসুক। তবে সব তরুণ দিয়ে তো আর আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন সংগঠন চলবে না। তাই তরুণের সংখ্যা এবার বেশি হতে পারে।’
সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত তিনজন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের কথা স্বীকার করে বলেন, মনে হয় এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তরুণদের দিকেই ঝুঁকেছেন। জাতীয় কমিটির সভায় তরুণ নেতা নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই বলা যায়, তরুণের সংখ্যাই বেশি হতে পারে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদে।
উপদেষ্টা পরিষদের এক নেতা বলেন, ‘শনিবার জাতীয় কমিটির সভায় পাবনা জেলার জাতীয় কমিটির এক সদস্যকে প্রথমে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কত বছরের। উনার শ্রবণশক্তি দুর্বল থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন তিনি স্পষ্ট বোঝেননি। তাই জবাবও দিতে পারেননি। পরে শেখ হাসিনা একই প্রশ্ন করেন উপদেষ্টা পরিষদের প্রভাবশালী এক সদস্যকে। তিনি উত্তর দেওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারা গাছ রোপনের সময় এখনই।’
/পিএইচসি/এআরএল/আপ-এমও/