সোমবার ইফতার অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতারা হলরুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাগত জানাতে তৎপর ছিলেন বিএনপি নেতারা। প্রত্যেক টেবিলে অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন করে সদস্য।
ইফতারের আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হলরুমে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। প্রবেশের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি নেত্রীকে নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না ও আসম আবদুর রবের টেবিলের কাছে নিয়ে যান। এই দুই নেতার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি এই দুই নেতার স্বাস্থ্যের খবর নেন। আসম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়য়ে জানতে চান।
চেয়ারে বসেই আ স ম আবদুর রবের পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী তানিয়া রবের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তানিয়ার কাছে খালেদা জিয়া জানতে চান তিনি রাজনীতি করেন কিনা। জবাবে রাজনীতি করেন বলে জানান তানিয়া রব। অন্যরা সুর মেলান, ‘উনি তো তার (আসম রব) চেয়েও বেশি রাজনীতি করেন।’ এরই মধ্যে টেবিলের আলাপে এসে যোগ দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী। এসেই খালেদা জিয়াকে সালাম দিয়ে আসম রবের সঙ্গে আলাপে যোগ দেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার উদ্দেশে বি চৌধুরী বলেন, ‘আপনাকে অভিনন্দন। আপনি নতুন দল করেছেন।’ এ সময় পাশে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মান্নাকে অভিনন্দন জানান। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আসম রব বলেন, ‘আমি দেবর, উনি ভাবি। (স্ত্রীকে দেখিয়ে)।’ তার কথার শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমিও দেবর।’ এ সময় টেবিলে বসা সব নেতাই জোরে হেসে ওঠেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী পথের জ্যামের কথা বলতেই মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কি জ্যাম! কাওরানবাজার মোড় থেকে বসুন্ধরায় আসতে ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে।’
প্রায় দশ মিনিট এই শীর্ষ রাজনীতিকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খানসহ অনেকে।
আলাপে-আলাপে ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চে উঠতে খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেন। খালেদা জিয়া মঞ্চের দিকে যাওয়ার সময় পাশের টেবিলে বসা জামায়াতের নায়েবে আমির আনম শামসুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কয়েক মুহূর্ত কুশল বিনিময় করেন। মঞ্চে উঠে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন বিএনপি প্রধান। জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কেমন আছেন? আপনাকে তো দেখা যায় না।’ এরপর মঞ্চের সব নেতার সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন জোটনেত্রী।
খালেদা জিয়া ইফতার শুরুর সময় আমন্ত্রিত রাজনীতিকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আজকের ইফতারে এসেছেন কষ্ট করে, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। রাস্তায় ব্যাপক যানজটের মধ্য দিয়ে আমাদের দলের ইফতারে শরিক হয়েছেন সবাইকে এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হলেও ক্ষমতাসীন দলের কেউ ইফতারে যোগ দেননি।
খালেদা জিয়ার ইফতার অনুষ্ঠানে যেসব দলের নেতা অংশ নেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান (এলডিপি) ড. কর্নেল অলি আহমেদ, জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক প্রমুখ।
রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে খালেদা জিয়ার দেওয়া ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।
/এমএনএইচ/