এবার থামেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন: খালেদা জিয়া

 





ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন খালেদা জিয়া‘এবার থামেন,১০ বছর তো অনেক দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন, গুম করেছেন। দেশ বাঁচাতে এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন’- বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারকে উদ্দেশ্য করে সোমবার ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপিপ্রধান এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া সরকারের নানা কর্মকাণ্ডেরর সমালোচনা করেন। 
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গত ১০ বছরে অনেক করেছেন। গুম, খুন করেছেন। আল্লাহর কাছে বিচার হবে। এবার থামেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।’ 

দেশের অর্থনেতিক বৈষম্যের কথা উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘একশ্রেণির বিত্তশালীরা বিদেশে গিয়ে মার্কেট করছে। আরেক শ্রেণি দুর্যোগের মধ্যে পড়ে আছে। দেশের মানুষ তো এখন ব্যাংকে টাকা রাখে না। কিন্তু যারা টাকা লুটপাট করেছে তাদের টাকা তো বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।’ 


দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাওরে এই ঈদের সময় দুর্ভিক্ষ চলছে। তারা একবেলাও খেতে পারছে না। বিশেষ করে হাওড়ের আগাম বন্যায় সেখানে বিপর্যয় এসেছে।’ 
আওয়ামী লীগ দেশকে সন্ত্রাস, দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি দিতে পারে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা হাওরের খোঁজ নিচ্ছে না। পাহাড় ধস হলেও সেখানে হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ দেওয়া যেতে পারতো, কিন্তু তারা তা করেনি।’

খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিয়েও কথা বলেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। 

সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। ঈদের দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিক-পেশাজীবী এবং দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন তিনি। এর আগে ১২টা ২৬ মিনিটে এই  মিলনায়তনে আসেন খালেদা জিয়া। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রায় ১৮ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী এসেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। এসময় বিএনপির স্থায়ী সদস্য কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়শুভেচ্ছা বিনিময়কালে খালেদা জিয়া চেয়ারে বসলেও দলের সিনিয়র নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। 

অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এদিন খালেদা জিয়া হালকা নীলরঙের ওপর বিভিন্ন কাজ করা একটি শাড়ি পরে মিলনায়তনে আসেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সাদেক খান, রুহুল আমীন গাজী, আবদুল হাই শিকদার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া  ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে জেবেল রহমান গাণি, শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। লাইনে দাঁড়িয়েও অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। লাইন মিলনায়তনের বাইরেও চলে যায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন খালেদা জিয়া। এরপর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বনানীস্থ সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নিজ বাসভবনে ফিরে যাবেন তিনি।

খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, জনগণ ভোটও দিতে পারবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করার পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করতে হবে।’ 
তিনি অভিযোগ করেন, ‘গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের মানুষও পরিবর্তন চায়। এই সরকারে কাছ থেকে জনগণ আর ভালো কিছু আশা করে না।’
মানুষের মনে ঈদের আনন্দ নেই দাবি করে বিএনপিপ্রধান বলেন, ‘পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সরকারের নজর নেই। হাওরবাসীদের মনে আনন্দ নেই। ঈদের আগে যানজটের ভোগান্তি মানুষকে নাজেহাল করে দিয়েছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল ও শোক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

শায়রুল কবীর খান জানান, সোমবার বিকাল তিনটায় বনানী গোরস্থানে সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া। এরপর বাসায় ফিরেন তিনি।
কবর জিয়ারতের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল, বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খানসহ ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


/এসটিএস/ এপিএইচ/