ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৪ সালের শেষের দিকে এই জোট গঠন করা হয়। সুতরাং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে জোটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে মৌলিক কোনও পার্থক্য রয়েছে কিনা, সাংঘর্ষিক কিনা, তা খতিয়ে দেখার আগে ফ্রন্টের যোগদান নিশ্চিত করতে চান না ১৪ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
১৪ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ইসলামিক ফ্রন্টের যোগ দেওয়ার বিষয় নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি শরিক দল। এসব দলের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে ১৪ দলের আদর্শিক দূরত্ব রয়েছে, তাই জোটে এই দলটিকে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবে না। তবে যদি জোটে অন্তর্ভুক্ত করাও হয়, তার আগে ওই সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে হবে। শরিক দলগুলোর এই দাবি আমলে নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্টের কাছে দলটির গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র চেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে সোমবার সন্ধ্যায় হাজির হতে বলা হয়েছে ইসলামিক ফ্রন্টের নেতাদের।
এদিকে রবিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলীয় জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ১৪ দলে যোগ দেওয়া নিয়ে আবারও আপত্তি তোলেন। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৪ দলে যোগ দিতে হতে হলে তাদের গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র ভালো করে যাচাই-বাছাই করা উচিত। ১৪ দলের সঙ্গে আদর্শিক পার্থক্য থেকে থাকলে সেটা বিশেষভাবে দেখতে হবে এবং আমাদের জোট অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।’
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসদ (একাংশের) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৪ দলের আদর্শের সঙ্গে একমত হয়ে কোনও দল বা সংগঠন একসঙ্গে কাজ করতে চাইলে যোগ দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘১৪ দলের পক্ষ থেকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কাছে তাদের গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র চাওয়া হয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে তারা জোটে যোগ দিতে পারবে।’
এ প্রসঙ্গে জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ১৪ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে গঠনতন্ত্র-ঘোষণা পত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে যাচাই-বাছাই করে সব ঠিক থাকলে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আর কোনও কথা বলব না।’ ১৪ দলের সভায় দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সভায় যা বলেছি, জোটের স্বার্থেই বলেছি।’
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যোগ দেবে।’ তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র নিয়ে শিগগিরই আমরা জোটের সমন্বয়কের সঙ্গে বসব। আমাদের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আমাদের গঠতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র চেয়েছেন। আমরা তা দেব।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোট সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘ইসলামিক ফ্রন্টের দু’জন নেতা মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ ও মাওলানা জয়নাল আবেদিন জুবায়েরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এসেছে। তারা জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার ইচ্ছে পোষণ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি ১৪ দলের একটি নীতি আদর্শ আছে। সে অনুযায়ী তাদের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র দেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের সিদ্ধান্তে কথা জানাব।’
/এমএনএইচ/