তরিকতের নেতৃত্বে আসছে নতুন ইসলামি জোট!

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে নতুন ইসলামি জোট গড়তে আগ্রহী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। প্রায় ছয় মাস ধরেই তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কওমিপন্থী কয়েকজন নেতা নতুন দল গঠনের বিষয়ে ঐকমত্যেও এসেছেন বলে জানা গেছে। ইসলামি দলগুলোর নতুন জোট করার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জোট গড়ার প্রক্রিয়ায়যুক্ত কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন এই জোট গড়ার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি। গত কয়েক মাসে তিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরমধ্যে কয়েকজন কওমিপন্থী নেতা নতুন জোট করার ব্যাপারেও ঐকমত্যে এসেছেন।

জানা গেছে, রমজানের আগে ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (জাফরুল্লাহ খান), ইমাম-উলামা পরিষদ, ফরায়েজি আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন এম এ আউয়াল। রোজার আগেই জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছে ইসলামী ফ্রন্ট। তবে এই জোট কিভাবে সামনে এগুবে, নির্বাচনি তৎপরতা নাকি কর্মসূচিভিত্তিক হবে- এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তরিকত ফেডারেশন। অবশ্য দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি এই ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একটি সূত্র। এ বিষয়ে সৈয়দ নজিবুল বশরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তরিকত মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, ‘ঐক্য প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে জোটটি নির্বাচনকেন্দ্রিক না কর্মসূচিভিত্তিক হবে, এটি এখনও ঠিক হয়নি।’ জোটভুক্ত দলে কারা থাকছে, এ নিয়ে চমক থাকবে বলেও জানান তিনি।

কয়েক বছর আগেও তরিকত ফেডারেশন প্রগতিশীল ইসলামী জোট নামে একটি জোট করেছিল। ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল ওই জোটে থাকলেও তা কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। এজন্য তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশরকে দায়ী করা হলেও এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ইঙ্গিতে তরিকত ফেডারেশন নতুন জোট করতে চাইছে। এই জোটের নেতৃত্বে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের কথা ভাবা হচ্ছিল। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথাও বলেছেন এম এ আউয়াল। তবে তাদের সমঝোতা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্ভাব্য এই জোট নিয়ে সরকার আগ্রহী। তবে কোন ফরম্যাটে এটি হবে বা এর কর্মসূচি কী হবে, এটি ঠিক হয়নি।

কওমিপন্থী দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই এখন নির্বাচনমুখী। এর মধ্যে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছাড়া বাকি দলগুলো কোনও জোটে নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রত্যাশা, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলো দুটি জোটে আসুক। একটি ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে, অন্যটি তরিকত ফেডারেশনের নেতৃত্বে। এই জোটটি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন এই জোটে যাওয়ার বিষয়ে খেলাফত আন্দোলন আগ্রহী বলে জানা গেছে। দলটির আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘দল যেহেতু করেছি সেহেতু নেতাকর্মীরা চাইলে জোটে যাবো। তবে কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’ এ জোটে যেতে পারেন ইমাম-উলামা পরিষদের আমির মাওলানা রুহুল আমিন সাদী। সিলেটের একটি মাদ্রাসার এই প্রিন্সিপাল বলেন, ‘প্রথমত, আমি দলের আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা করিনি। দ্বিতীয়ত, নতুন কোনও জোটে যাবো কিনা, এটা এখন বলা সম্ভব নয়।’ রুহুল আমীন সাদী খেলাফত মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং ইসলামী ছাত্র মজলিসের দুবারের সভাপতি। তার নেতৃত্বে একটি নতুন দল আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।

/এএম/এসটি/