বিএনপিকে চাপে রাখতে আ. লীগের দুই কৌশল

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিএকাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে চাপে রাখতে দুই কৌশল অবলম্বন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কৌশল দু’টি হলো—মাঠের রাজনীতিতে বক্তব্য দিয়ে বিএনপি নেতাদের মোকাবিলা করা এবং তাদের মামলা ও গ্রেফতারের চাপে রাখা। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন পর্যন্ত সরকার বিএনপির বিষয়ে ‘জিরো ট্রলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই দুই কৌশল অনুসরণ করে বিএনপির নেতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির রাজনীতি যত বেশি আন্দোলনমুখী হয়ে উঠবে, দলের নেতাদের ওপর তত বেশি মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রাখা হবে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের নামে থাকা পুরাতন মামলা আবার চাঙ্গা করা হচ্ছে। তবে নতুন মামলার সংখ্যাও বাড়বে। সেই সূত্র ধরে ধড়-পাকড় অভিযানও অব্যাহত থাকবে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সরকারের ভেতরে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যেন আন্দোলনমুখী না হতে পারে, সেই চেষ্টা করা হবে। এই আশঙ্কা থেকে বিএনপি নেতাদের কব্জায় রাখতে মামলাগুলো আবার চাঙ্গা করতে চায় সরকার।
দলটির নীতি-নির্ধারকদের কয়েকজন ও একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। এছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাল রায় ঘোষণার পর বিএনপি যেন সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে বেআইনিভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যেদিনই দলের চেয়ারপারসন আদালতে যান, সেদিনই নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। পরে তাদের বিভিন্ন মামলায় আসামিও করা হচ্ছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিমকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনও আলামত দেখতে পাচ্ছি না।’
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ সত্য নয়। আমি যতদূর জানি, রাস্তায় বাস ভাঙচুর করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার যেকোনও মূল্যে নির্বাচন পর্যন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অন্যায়ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে অন্যায় দাবি আদায়ের কোনও সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। তবে বিএনপি আবারও মাঠে নেমে জ্বালাও-পোড়াও এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও মহলের অন্যায় আন্দোলন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন-
খালেদা জিয়ার মামলা: আগে পর্যবেক্ষণ, পরে কর্মসূচি
‘মরার আগে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় রেখে যেতে চাই’