বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: বি.চৌধুরী

বদরুদ্দোজা চৌধুরী (ফাইল ছবি)একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই সামনের দিনগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এসময় বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পাশাপাশি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংসদ গঠনকেও সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুড়িল বিশ্বরোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বদরুদ্দোজা চৌধুরী এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বিকল্প ধারার প্রধান বলেন, ‘দেশে আজ নির্বাচনের কথা উঠেছে। নির্বাচনি আবহাওয়ায় আমরা দেখি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার একটি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। এটি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। তবে এটি সত্য, আদালত যদি নির্দেশনা দিতেন যে একটি ট্রাস্ট গঠন করে সুদসমেত পুরো টাকাটা তাতে ব্যয় করা হোক— এতে আমি সন্তুষ্ট হতাম।’ এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু হিংসার রাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয়। আমি কখনও কাউকে ক্ষমা করি না— এটা বাহাদুরি হতে পারে, কিন্তু এটা রাজনীতিতে সবসময় প্রযোজ্য নয়। কাজেই ক্ষমা প্রদর্শন, সহনশীলতা ও সম্মানের রাজনীতি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ভবিষ্যতের রাজনীতি হবে ক্ষমতায় থাকলে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় আর বিরোধী দলে হলে জেল, জুলুম ও হুলিয়া। এতে রাজনীতি কখনও সুন্দর হবে না এবং ভালো মানুষ রাজনীতিতে উৎসাহী হবে না।’
বি.চৌধুরী আরও বলেন, ‘ভাষা দিবসের মূল কথা মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা। মাতৃভাষা হলো মায়ের পরেই, এটা মায়ের ভাষা। মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি— এই তিনটির জন্য মানুষ জীবন দিতে পারে। পৃথিবীতে বাংলাদেশের মানুষই ভাষার জন্য প্রথম আত্মত্যাগ করেছে। মাতৃভাষার পরেই মাতৃভূমির কথা আসে। মাতৃভূমির জন্য আমাদের যে যুদ্ধ, এর মূল প্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন। অথচ মাতৃভাষাকে যেভাবে প্রতিষ্ঠা করার কথা ছিল, তা আমরা পারিনি। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।’ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে নিজের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা এখন বাংলায় প্রেসক্রিপশন লিখেন। এটা আমিই প্রথম প্রচলন করি। আর এর জন্য আমাকে কবিরাজ বলা হতো!’
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে দেশের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে বলে শঙ্কার কথা জানান বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শিক্ষামন্ত্রী বা সচিব প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন না বলে তাদের দায় নেই কিংবা আর্থিক কেলেংকারির দায় অর্থমন্ত্রীর নয়— প্রধানমন্ত্রীর এ এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ কথাগুলো সঠিক নয়। আপনি আজ থেকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত— এ কথা বলেই মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাই মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের কৃতিত্ব যেমন তার (মন্ত্রী), তেমনি ব্যর্থতার দায়ভারও তাকেই বহন করতে হবে।’
আমাদের দেশে একটি সড়ক বা সেতু তৈরিতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এর অর্ধেক খরচেই সম্পন্ন হয় বলে উল্লেখ করেন বিকল্প ধারার প্রধান। তিনি বলেন, ‘এসব দেখে মনে দুঃখ হয়। এগুলো যদি দুর্নীতি না হয়, তবে অবশ্যই তা অযোগ্যতা। দুর্নীতি বা অযোগ্যতা যাই বলি না কেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই এর দায়ভার নিতে হবে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
সভায় অনান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্জুর মোরশেদ, যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি আলহাজ্ব অহিদউদ্দিন, ওয়াসিমুল ইসলাম, জানে আলম হাওলাদার, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, মো. শাহ আলম, রাকিব হাসনাত, জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ।