সময়—৮ জানুয়ারির দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকে দেখা গেলো, রুমের একপ্রান্তে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুরের একটি বড় ছবি। তবে সেখানে কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। এই ফ্লোরটি গ্লাস দিয়ে দুটি অংশে বিভক্ত। ফ্ল্যাটের একটি অংশের ছোট তিনটি রুম বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর একটি ব্যবহার করেন দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান, বাকি দুই রুমের একটি ব্যবহার করেন দলটির সহ-দফতর সম্পাদক রেজাউল করিম। বাকি একটি রুম ব্যবহার করা হয় দলের কোনও অনুষ্ঠান থাকলে। যদিও বছরে একবারও এই অফিসে আসেন না দলটির চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘নিয়মিত অফিস করা হয় না। তবে কোনও রাজনৈতিক প্রোগ্রাম থাকলে এই কার্যালয়ে যাই।’
এই ফ্লোরের অন্য অংশে কী হয় জানতে চাইলে এই ‘প্রকৌশলী’ বলেন, ‘এখানে স্বদেশ ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লি.; এশিয়াটিক ট্রেডিং করপোরেশন ও একটি সমিতির কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবী বসেন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই তিন রুমের একটি বন্ধ থাকলেও বাকি দুটির একটি রুমে কয়েকটি চেয়ার ও ২টি টেবিল রয়েছে। টেবিলে একটি পত্রিকা রাখার র্যাক, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর একটি করে ছবি রয়েছে। অন্য রুমে একটি টেবিল ও প্রায় ২৫টি চেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আবার ভাঙা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘ওখানে দশ বছর ধরে পার্টির অফিস। এটি আমাদের দলের স্থায়ী কার্যালয়। অফিসে আমার বাবার ছবিও দেওয়া আছে।’
কার্যালয়ে দলের সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে আমাদের অন্য কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্সের জন্য বাণিজ্যিক জায়গা দরকার। এজন্য দলের সাইনবোর্ড নেই। অন্য অফিসগুলোর বাণিজ্যিক কার্যালয় হিসেবে এই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। আসলে কোনও কোম্পানির জন্য গুলশানে কোনও অফিস নিলেও বাণিজ্যিক কার্যালয় ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দলটির বড় ধরনের কোনও সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। জেলা পর্যায়ে নেই কোনও কার্যালয়।
এ বিষয়ে আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘আমরা যখন নিবন্ধন নিয়েছি, তখন সারাদেশে ৩৪টি জেলায় সক্রিয় কমিটি ছিল।’ বর্তমানে ১২টি জেলায় সক্রিয় কমিটি আছে বলেও তিনি দাবি করেন।
দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে এখন তো দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার মতো কোনও অবস্থা নেই।’ দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
দলের কার্যালয়ে কেউ নেই কেন জানতে চাইলে আন্দালিভ রহমান বলেন, ‘আমাকে একটি ফোন করে গেলে আমি বলে দিতাম, তাহলে সবাই থাকতো। দিনের বেলা হয়তো অফিসে কেউ থাকেন না। ভোলা থেকে যেসব নেতাকর্মী আসেন, তারা সবাই পল্টনের কার্যালয়ে থাকেন।’
দলটির চেয়ারম্যান সারাদেশে ১২টি জেলায় কমিটি আছে বলে দাবি করলেও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল সাউদ মতিন বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ৪০টি জেলায় সাংগঠনিক কমিটি আছে।’ কোন কোন জেলায় কমিটি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে মনে নাই। আপনাকে পরে জানাবো।’
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে দাবি করলেও বাস্তবে তাদের কোনও ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, নাজিউর রহমান মঞ্জুরের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দলটি জাতীয় পার্টি (নাজিউর) নামেও পরিচিত। মূল দল জাতীয় পার্টি থেকে বিভক্ত এই দলটি চারদলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর ২০০৯ সালের নির্বাচনে দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ ভোলা থেকে নির্বাচিত হন।
(আগামীকাল- পর্ব ২: নেতারা ব্যস্ত ব্যবসায়, তালাবদ্ধ পিডিপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়)