পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যান ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী স্ট্রোক করে প্যারালাইজড অবস্থায় দীর্ঘদিন বাসায় আছেন। অন্য নেতারা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। নেতাকর্মীর অভাবে বেশিরভাগ সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলে থাকে।
গত ৮ ও ৯ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় (৮/৪, তোপখানা রোড) পিডিপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখা গেছে। কথা বলার মতো পাওয়া যায়নি দায়িত্বশীল কাউকে। কার্যালয়ে ঢোকার গেটের সামনে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। কার্যালয়ের ভেতরের আঙ্গিনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন পোস্টার।
জানালার পর্দা সরিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কয়েকটি চেয়ার, টেবিল, একটি আলমারি ও কিছু বই থাকলেও এসবের ওপর পড়েছে ধুলোর আস্তরণ।
৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় পিডিপির কার্যালয়ে কথা হয় নিরাপত্তাকর্মী মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে রাতে থাকি, দিনে নয়।’
দিনের বেলায়ও অফিস বন্ধ কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে মেহেদি বলেন, ‘ম্যাডাম (দলের কো-চেয়ারম্যান নিলুফার পান্না কোরেশী) বলেছেন, আজ অফিসের ঠিকানায় একটি চিঠি আসবে। তাই চিঠি নিতে এসেছি।’
তালাবদ্ধ একটি রুম দেখিয়ে মেহেদি বলেন, ‘এটি পিডিপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে দলের চেয়ারম্যান ফেরদৌস কোরেশী স্যার অসুস্থ থাকার কারণে অফিসে আসেন না। দিনের বেলায় সবসময় কার্যালয় বন্ধ থাকে, রাতে মাঝে-মাঝে কয়েকজন নেতাকর্মী আসেন।’
এ প্রসঙ্গে পিডিপি’র মহাসচিব প্রিন্সিপাল এম এ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছোট দল, মানুষ তেমন একটা খোঁজ-খবর নেয় না। দলের নেতারা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বস্ত থাকেন। তাই দিনের বেলা অফিস বন্ধ থাকে। তবে সন্ধ্যার পর প্রায় দিনই কিছু নেতাকর্মী অফিসে আসেন।’
এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব এম এ হোসেন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার কথা। তবে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আমাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু জেলা-উপজেলায় আমাদের কমিটি আছে। আগে চার-পাঁচটি জেলায় দলের কার্যালয় ছিল। এখন কী অবস্থা জানি না। নেতারা নিজেদের বাড়িতে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।’
তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর এই প্রতিবেদককে হেমায়েত উদ্দীন ফোন করে বলেন, ‘বেশকিছু জেলায় কমিটি আছে। তবে এ বছর ৬৪ জেলায় কমিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
হেমায়েত জানান, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে হওয়া কাউন্সিলে ২৫১ সদস্যের কমিটি হয়। ওই কমিটিতে ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী চেয়ারম্যান, নিলুফার পান্না কোরেশী কো-চেয়ারম্যান, প্রিন্সিপাল এম এ হোসেন মহাসচিবের দায়িত্ব পান।
কো-চেয়ারম্যান নিলুফার পান্না কোরেশীর মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ‘তিনি বাসায় নেই’ বলে লাইন কেটে দেওয়া হয়। পরে কয়েকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়ে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মহাসচিব প্রিন্সিপাল এম এ হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী দুই বছর ধরে অসুস্থ। তার অসুস্থতার কারণে এম দেলাওয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু তিনি দল থেকে কোরেশী স্যারকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন। পরে তারা নিজেরা বের হয়ে আরেকটি কমিটি করেন। কিন্তু হাইকোর্ট ও নির্বাচন কমিশন আমাদের অংশকে বৈধ দল ঘোষণা করেছে।’
(আগামীকাল পর্ব-৩: ঢাকা ও নীলফামারীতে ‘সীমাবদ্ধ’ বাংলাদেশ ন্যাপ)
আরও পড়ুন:
বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বহুমুখী সমিতির সাইনবোর্ড!