সভাপতির গাড়ির গ্যারেজে জাগপা’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়!

সরেজমিন রাজনৈতিক কার্যালয় পর্ব-৯

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে নেন তার স্ত্রী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শফিউল আলম প্রধানের বাসভবনকে। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেই অর্থে কোনও কার্যালয়ের অস্তিত্ব নেই সেখানে। বাসভবনের নিচে গাড়ির গ্যারেজে দুটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার পেতে সেটাকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

শফিউল আলম প্রধান জীবিত থাকাকালে জাগপাকে কিছুটা সক্রিয় দেখা গেলেও তার মৃত্যুর পর দলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। নেই নিজস্ব কোনও কর্মসূচি। ২০১৭ সালের ২১ মে মারা যান শফিউল আলম প্রধান।

এই ভবনের নিচতলায় জাগপার প্রধান কার্যালয়

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া জাগপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা মোহাম্মদপুরে আসাদ গেটের এক নম্বর সড়কের দুই নম্বর বাড়ি। ১৪ মার্চ বিকাল ৫টায় ওই ঠিকানায় গিয়ে দলটির কোনও সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। ওইখানে কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে—এমন তথ্য জানেন না আশপাশের দোকানিরাও। পাঁচতলা একটি বাড়ির নিচে গাড়ির গ্যারেজে এক কোণে দুটি টেবিল ও সাত-আটটি চেয়ার পাতা আছে। আছে দলের প্রতিষ্ঠা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের কয়েকটি ছবি এবং একটি টেলিভিশন। নিচতলায় একজন কাঠমিস্ত্রিকে কাজ করতে দেখা গেছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেহানা প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি এখন অসুস্থ আছি। এখন তো কথা বলতে পারবো না। আপনি কয়েকদিন পরে আসুন।’    

জাগপা কার্যালয়

বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাঁচতলা ভবনটির মালিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। বর্তমানে এ বাড়িতে শফিউল আলম প্রধানের পরিবারসহ তার ভাই-বোনের পরিবার থাকে। বাড়িটির একটি অংশ কলেজ পর্যায়ের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

বাড়ির সামনে ফুটপাতে চা বেচেন গাজী ফকির। একসময় তিনি শফিউল আলম প্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। শফিউল আলম প্রধান মারা যাওয়ার পর ফুটপাতে চায়ের দোকান চালান।

গাজী ফকির বলেন, ‘৪০ বছর ধরে নেতা শফিউল আলম প্রধানের সঙ্গে ছিলাম। তিনি দেশের যে প্রান্তে সফরে যেতেন আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থাও চা দোকান করতাম। তবে পার্টির কোনও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থাকলে দোকান বন্ধ করে অংশ নিতাম। এখনও যদি দলের কোনও প্রোগ্রামে ডাক পড়ে তো যাই, আর না ডাকলে দোকান করি।’

জাগপা কার্যালয়

গাজী ফকিরের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় হলেও তিনি পঞ্চগড়ের ভোটার। তিনি বলেন, ‘আমার নেতা পঞ্চগড় সদর থেকে নির্বাচন করতেন। নেতাকে ভোট দেওয়ার জন্য আমি নিজের গ্রামে ভোটার না হয়ে পঞ্চগড়ের ভোটার হয়েছি।’   

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। দলটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তথ্য দিতে অপারগতা জানান। জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে কয়েক দফা সময় দিয়েও দেখা করেননি। পরে তিনি ফোনে বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে ৩০টি জেলায় কমিটি আছে।’

তিনি জানান, জাগপা’র কেন্দ্রীয় কমিটি ১০১ সদস্যের। সর্বশেষ কবে দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে সে বিষয়ে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

জাগপা কার্যালয় এলাকা

নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের কমিটিতে ১২ শতাংশের মতো নারী নেত্রী রয়েছে।’ 

জানা গেছে, জাগপা’র নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই। তবে ফেসবুকে একটি আইডি থাকলেও সেখানে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চের পর কোনও আপডেট নেই। এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি দলের সাধারণ সম্পাদক।  

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিউল আলম প্রধান। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাত ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আসামি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। সে সময় তাকে কারাগারে যেতে হলেও পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মুক্তি পান। ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। নিজে হন সভাপতি ।

শফিউল আলম প্রধানের জন্ম ১৯৫০ সালে, পঞ্চগড়ে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার জমির উদ্দিন ছিলেন তার বাবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করা প্রধান ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি জীবিত অবস্থায় দল কিছুটা সক্রিয় থাকলেও তার মৃত্যুর পর দলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দু-একজন নেতাকে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি থাকলে তাতে অংশ নিতে দেখা যায়।