খালেদা জিয়ার বিদেশি লবিস্ট নিয়ে যা ভাবছে আ. লীগ

 

খালেদা জিয়া ও লর্ড কারলাইলবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি দলটির জন্য ক্ষতিকর ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই লবিস্ট নিয়োগের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার আশঙ্কা করে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া ও তার পরিবার বিশ্বের কাছে ইতোমধ্যে দুর্নীতিবাজের খেতাব অর্জন করেছে। এখন দুর্নীতির দায়ে সাজা হওয়া মামলাটি বিএনপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় নিতে গেলে ওই পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি আরও ছড়িয়ে পড়বে। তারা বিশ্বের কাছে পাকাপোক্ত দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

প্রমাণিত দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি বিশ্বের কাছে সাড়া পাবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার পর বিএনপি ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকসহ আন্তর্জাতিক মহলে এটাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোথাও কোনও সাড়া তারা পাননি। খালেদা জিয়া দেড় মাসের বেশি কারাগারে থাকলেও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহল থেকে তাদের পক্ষে কোনও বক্তব্য বিবৃতি আসেনি। বরং তাদের অনেকে এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গেছেন। দুর্নীতির বিষয়টি যতই ঘাঁটাঘাঁটি করা হবে, ততই দুর্গন্ধ ছড়াবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিতে চাইলে সাড়া তো পাবেই না, বরং বিষয়টি হিতে বিপরীত হবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় তার আইনজীবীদের প্যানেলকে সহযোগিতা দিতে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিএনপি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ব্রিটিশ হাউজ অব লর্ডসের এই সদস্যকে আইনজীবী নিয়োগের পেছনে তাদের প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলাটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় নেওয়ার উদ্দেশ্যও রয়েছে। 

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের দায়ে পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে পুরান ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। তিনি হাইকোর্ট থেকে চার মাসের জামিন পেলেও সর্বোচ্চ আদালত তা স্থগিত করেছেন।

এদিকে বিএনপির নিয়োগ দেওয়া এই ব্রিটিশ আইনজীবীকে নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই আইনজীবীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধে জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে।

এ বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জামায়াতকে আঁকড়ে ধরার জন্যই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী পরিবর্তন করে মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর নিয়োগ নেওয়া আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। একাত্তরের ঘাতকের লবিস্ট আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়ে প্রমাণ করেছে খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়েননি, একাত্তরের ঘাতকদের ছাড়েননি।’

আইনজীবীর নামে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করে খালেদা জিয়া দুর্নীতি থেকে রেহাই পাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা আন্তর্জাতিক আলোচনায় নিতে নাকি এই বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এই লবিস্টকে নিয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছে। খালেদা জিয়াও সফল হবেন না। বরং এই লবিস্ট আইনজীবী খালেদা জিয়ার পরিবারের দুর্নীতি বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দেবেন। তারা বিশ্বের কাছে পাকাপোক্ত দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।’

দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক স ম রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি বিদেশিদের দিয়ে আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে তাদের  দুর্নীতির অর্থ বিনিয়োগ করে এই বিদেশি আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছে। তবে, জামায়াতও প্রচুর টাকা খরচ করে এই আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে পারেনি। বিএনপিও সফল হবে না। দুর্নীতির সাজা থেকে রেহাই পাবে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে। তার সাজা হয়েছে। বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে প্রমাণিত দুর্নীতি মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না।’

দলের এই নেতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে যে আইনজীবী কাজ করছিলেন, খালেদা জিয়া তাকে নিজের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে তিনি এ ধরনের কাজ করতে পারেন, এটা আমাদের চিন্তায়ও আসে না।’

সভাপতিমণ্ডলীর অন্য এক সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি আইনজীবী যে কেউ নিয়োগ দিতে পারেন, সেটাকে আমি খারাপ দৃষ্টিতে দেখি না। তবে, প্রশ্ন জাগে কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে।’