‘ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছে করে গুম করে ত্রাস কায়েম করছে'

মায়ের ডাক আয়োজিত গণশুনানিতে জুনায়েদ সাকিনাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যারা ক্ষমতায় আছে তারা ইচ্ছে করে গুম করে ত্রাস কায়েম করছে। নির্বাচনের বছর আপনারা যতই কান্নাকাটি করেন কেউ শুনবে না। শনিবার (২১ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে মায়ের ডাক আয়োজিত গণশুনানিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এই অনুষ্ঠানে আমি প্রতিবারই আসি। এই কান্না এই আহাজারি দেখতে দেখতে প্রতিবছর পার হয়ে যাচ্ছে। সবার পরিবারে একটা বিভীষিকার ছাপ, একটি ভয়ের ত্রাস। মা চিৎকার করে কাঁদছেন তার সন্তানের জন্য। প্রধানমন্ত্রীও একজন মা, আপনি মায়ের দুঃখ বোঝেন। আপনি তাদের ফিরিয়ে দিন। ‘মানবতার মা’ মানবতার ডাকে সাড়া দিন।”
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই যে মানবতার মাকে ডাকছেন, পাঁচ বছরেও কোনও সাড়া পেয়েছেন কি? গুম হয়ে যাওয়া পরিবেশবাদী, সাংবাদিকরা ফেরত আসেননি? আমরা কি দেখিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুম হওয়া ব্যক্তি ফেরত আসতে?’
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই যে যারা গুম হয়েছেন, তাদের পরিবারকে মানবিক মর্যাদা তো দূরে থাক, তাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই। ক্ষমতার মোহ যে কেমন এটা যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা নিজেরাও জানেন না। তেল-গ্যাস-বন্দর-খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটির ২০১৩ সালের লং মার্চে শামীমকে দেখেছিলাম। ফিরে এসে শুনি সে নাই। আজকে কার হাতে এই ক্ষমতা? ক্ষমতা যদি অন্য কারও হাতে থাকে তাহলে সামনে আমাদের জন্য আরও বড় দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। আজকে মায়েরা ডাক দিচ্ছেন, কাঁদছেন তাদের সন্তানের ফিরে পাওয়ার জন্য। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু নেই আমাদের জন্য!’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘গুম, খুন সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপার। এর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। অরাজনৈতিক কারণেও অনেকে গুম হয়ে যান। তার নিরাপত্তাও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। গুম বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সমস্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুরো রাষ্ট্র এখন একক ক্ষমতায় কেন্দ্রীভূত। মায়ের ডাকের এই লড়াইকে আরও জোরদার করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড.আসিফ নজরুল বলেন, ‘স্বজনহারা পরিবারদের কথা শুনলে বুক ফেঁটে কান্না আসে। আমারও মেয়ে আছে। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরতে ১০-১৫ মিনিট দেরি হলেই চিন্তায় পড়ে যাই। গুম করা মানুষ হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। গুমের পেছনে সরকার দায়ী বলে আমরা মনে করি। এর পক্ষে কয়েকটি যুক্তি আছে। প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে আমরা শুনেছি ডিবি কিংবা র্যা বের গাড়ি তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছে গেলে মামলা নিতে চায় না। মামলা নিলেও তদন্ত হয় না। গুমের শিকার যারা হচ্ছে তারা অধিকাংশই সরকারের সঙ্গে বিরোধ অথবা দ্বিমত পোষণ করছে। যারা ফেরত আসে তারা মুখ বন্ধ করে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কে ক্ষমতায় আসবে এই চিন্তা করে বসে থাকলে এই ভয়ের সংস্কৃতির চ্যাম্পিয়নরা আরও বেশি সুযোগ পাবে।’
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফা চৌধুরী মণি বলেন, ‘আমি নিজেও একজন মা, আমার সন্তান আছে। আমরা যদি ঘরে বসে থাকি, নিজে নিজে কান্না করি তাহলে আমরা সূর্য দেখতে পারবো না। আমাদের ইচ্ছা থাকলেও আমরা কিছুই করতে পারি না। আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেইসব মাদের যারা সন্তানের আশায় এখানে এসেছেন। আমার প্রশ্ন সরকারের কাছে একজন মানুষকে মারতে হলে কি এরকম করা লাগে? কয়েকদিন আগে ছাত্রদলের মিলন পুলিশের হেফাজতে মারা গেল। এক বিবেকহীন চিকিৎসক বলে দিলেন, তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। আমরা যদি চুপ করে থাকি এ দেশ সন্তানহীন দেশে, এমনকি মেধাহীন দেশে পরিণত হয়ে যাবে।’