বি. চৌধুরীর বক্তব্যের সমালোচনায় বিএনপির শরিকরা

ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (ফাইল ছবি)

রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে বিএনপির ইফতার মাহফিলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। জোটের নেতারা বলছেন, বি. চৌধুরীর ওই বক্তব্য অনৈতিক। তার বক্তব্যে জোটের নেতারা হতাশ। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি ছিল বি. চৌধুরীর ব্যক্তিগত বক্তব্য।

শনিবার (১৯ মে) রাজধানীর লেডিস ক্লাবে রাজনীতিকদের সম্মানে ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বি. চৌধুরীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই। প্রথমত বি. চৌধুরী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেননি। তিনি বিএনপির মঞ্চে এসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে নিজের গুণগান গেয়েছেন। তার এ বক্তব্য অরাজনৈতিক ও অনৈতিক।’

সেলিম আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বি. চৌধুরী একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা শঙ্কিত যে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়, তাহলে তো দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমি মনে করি, তার এ বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি। আজ তাকে এ ধরনের বক্তব্য দিতে দেওয়া উচিত হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’

২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বি. চৌধুরী বিএনপির আমন্ত্রণে এসে তাদেরই সমালোচনা ও বদনাম করেছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তিও দাবি করেননি। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে তৃতীয় শক্তি বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? অগণতান্ত্রিক কোনও শক্তি। এর মাধ্যমে তিনি কী প্রমাণ করতে চান, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত না থাকুক। সবকিছু মিলিয়ে তার বক্তব্যে ২০-দলীয় জোটের নেতারা খুব হতাশ। ওনার মতো গণতান্ত্রিক রাজনীতিকের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করিনি।’

২০-দলীয় জোটের আরেক শরিক দল এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মুর্তজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে আশা করিনি। তিনি বিএনপির মঞ্চে এসে তাদেরই বদনাম করেছেন। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। তিনি কী কোনও অশুভ শক্তির আহ্বান করছেন?’

ইফতার মাহফিলে বি. চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বিএনপির নেতারা বেশি না হলেও কর্মীদের ভয়ে বুক কাঁপে দুরদুর করে। কাঁপবে না কেন, তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। কী হবে যদি আবার সরকারি দল ক্ষমতায় আসে? এবারে আমাদের কী হবে–এটা স্বাভাবিক শঙ্কা। অভিজ্ঞতা বলে খুব সুবিধা হবে না। একইভাবে সরকারের কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মী আমার কাছে আসছেন, তাদেরও বুক কাঁপে। যদি বিএনপি আসে, তাহলে তাদের কী হবে? এটা কি খুব ভালো কথা, এটা কি রাজনীতির জন্য শুভ, এটা কি দেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ? এটা কি এই ইঙ্গিত নয় যে একটা পর্যায়ে যেতে পারে দেশ–যেখানে মানুষ মানুষকে হত্যা করবে, নিগৃহীত করবে, জেলে দেবে, আগুন জ্বালিয়ে দেবে। কিন্তু থামাবে কে? আমি চিন্তার খোরাক দিয়ে গেলাম।’

বি. চৌধুরী আরও বলেছিলেন, ‘এমন একটা শক্তি দরকার যে ওদিকেও কন্ট্রোল করতে পারে, এদিকেও কন্ট্রোল করতে পারে। তারা যদি উঠে আসতে পারে; বলে দেয়–তোমরা যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দাও, তাহলে সমর্থন উইথড্র করবো, গোল্লায় যাও, বিরোধী দলে যাও। এটাও বলবে, ওটাও বলবে। একমাত্র তাহলেই দেশ রক্ষা পেতে পারে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের দেশে যেন সে রকম দুর্যোগ না আসে। আমরা যেন মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালো ভাবতে শিখি।’

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি বি. চৌধুরীর ব্যক্তিগত বক্তব্য। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই। আর এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ ছিল না, ধর্মীয় বিষয় ছিল।’