বিএনপি না এলেও নির্বাচনে দলের কমতি হবে না: কাদের

ওবায়দুল কাদের (ফাইল ছবি)আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলেও অংশগ্রহণকারী দলের কমতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অংশ নিলে বড় দল হিসেবে নির্বাচন পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। কিন্তু বিএনপি না এলেও নির্বাচন থেমে থাকবে না। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যার ঘাটতি হবে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রবিবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে যুবলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে বিভিন্নজনের পরামর্শের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকেই আজ সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দেন। ঐক্যের কথা বলেন। তারা বলেন, নির্বাচনে বিএনপিকে আনার কী উদ্যোগ আপনাদের। এ উদ্যোগ কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ছিল না? গণভবনের আমন্ত্রণে সেদিন খালেদা জিয়া এলে দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের নবতর অধ্যায় সূচিত হতো। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের অভিযোগ হতো না; এ অপরাধ তাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তারাই তৈরি করেছেন। তবে আশার বিষয় হলো, এবার কেউ সেই ফাঁদে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার) পড়ছে না।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় না। তারা চায় জাতীয়তাবাদী নির্বাচন কমিশন। তারা স্বাধীন বিচার বিভাগের পরিবর্তে জাতীয়তাবাদী বিচার বিভাগ চায়। তারা চায় নির্বাচন কমিশন আগেই বিজয়ের গ্যারান্টি তাদের দিয়ে দিক। তারা না জিতলে নির্বাচন কমিশন খারাপ, সরকার খারাপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পর্যবেক্ষকরা দুই তিনটি অনিয়মের কথা বলেছেন। তাতে আমরা ডিফার করি না। এত বড় একটা নির্বাচনে দুই তিনটা অনিয়ম হতে পারে। কিন্তু এজন্য পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএনপি। খুলনায় আমাদের প্রার্থী ক্লিন ইমেজের, সৎ, সন্ত্রাসে নেই। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীর বিষয়ে সবাই জানেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গাজীপুরেও মনোনয়ন দিয়েছে নতুন প্রজন্মের একজনকে, যে ক্লিন ইমেজের। সৎ; তার বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তাকে মনোনয়ন দিয়ে আমরা অর্ধেক বিজয়ী হয়ে গিয়েছি। কারণ, অসৎ, অযোগ্য, মানুষের টাকাপয়সা লুট করে খায়, চাঁদাবাজি করে, সন্ত্রাস করে–এ ধরনের কোনও লোককে আমরা মনোনয়ন দিইনি। এখানেই শেখ হাসিনার বিজয় হয়ে গেছে।’

ক্ষমতাসীন দলের লোকের পকেট ভারি করার জন্য ঈদের আগে সড়ক মহাসড়ক মেরামত করা হচ্ছে– বিএনপির এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দায়িত্বের সাত বছরে সচিবালয়ের বারান্দায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আমি দেখিনি। আমার কাছে কাজের জন্য কর্মীরা আসে না। কিন্তু বিএনপির আমলে তাদের নেতাকর্মীদের জন্য দাঁড়ানোই যেতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দল একটা নিয়মে চলে। অনেকেই অভাব-অনটনে আছেন। তারপরও কোনও সুবিধা দিতে পারিনি। এখন তো ই-টেন্ডার। বুঝিয়ে বলি, কষ্ট পান। তারপরও এ অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিলে কেউ গ্রহণ করবে না। এটা বিএনপির অভ্যাস।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি নিয়েও বিতর্ক হয়। যে রণধ্বনি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয়ী করেছে, তাকে কেন যেন মনে হয় শুধু আওয়ামী লীগের। আর কেউ রণধ্বনি উচ্চারণ করে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট হতে চাই না। এটাকে ভাগ করতে চাই না। মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সম্পদ ভাবতে চাই না। কিন্তু এ দেশে এরা কারা, যারা মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিকে তাদের স্লোগান হিসেবে মেনে নেয় না। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে প্রকাশ্যে একটি দলের ভাইস চেয়ারম্যান স্বাধীনতার শত্রু বলতে দ্বিধা করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা চাননি, এমন দম্ভোক্তি যারা উচ্চারণ করে তাদের সঙ্গে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কোনও সুযোগ নেই; যারা ৭ মার্চের ভাষণ স্বীকার করে না, তারা কিসের মুক্তিযোদ্ধা–তা আমাদের ভাবতে হবে।’

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সঞ্চলনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান আতা, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কাজী আনিসুর রহমান, ইকবাল মাহমুদ বাবলু, মিজানুল ইসলাম মিজু, রওশন জামিল রানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল ইসলাম খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।