‘নির্দলীয়’ থেকে ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবিতে বিএনপি!

বিএনপির জনসভার ব্যানার

গত ৯ বছর ধরে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করার কথা বলে এলেও সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন শুধুই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভা করে যে সাত দফা ঘোষণা করেছে তার কোথাও ‘নির্দলীয়’ সরকারের দাবি নেই। এমনকি জনসভার ব্যানারেও ‘নির্দলীয়’ শব্দটির উল্লেখ ছিল না।

রবিবারের সমাবেশে দলটির পক্ষে দাবিনামা হিসেবে সাত দফা ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেন সমাবেশের সভাপতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার উল্লিখিত দফাগুলো হচ্ছে:

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই-

১. দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,

২. জাতীয় সংসদ বাতিল করা

৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা

৪. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা

৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা

৬. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যব্ক্ষেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যব্ক্ষেণে তাদের ওপর কোনও ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা।

৭.

ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,

খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনি ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনও মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা

গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা

ঘ)কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।

বিএনপির সাত দফা

এসব দফা ও লক্ষ্য এবং দলটির ঘোষিত কর্মসূচি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ‘ নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। সমাবেশের সিনিয়র নেতাদের দেওয়া বক্তৃতাতেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পাওয়া যায়নি। এর বদলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নামা পেশ করেছেন তারা। দলটির ঘোষিত দফাতেও নিরপেক্ষ সরকারের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ সংসদে এই সংশোধনীটি উত্থাপন করেন  তদানীন্তন বিএনপি সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার। ২৬৮-০ ভোটে সংশোধনীটি সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৮ মার্চ। সংবিধানের এই ধারা অনুসারে তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই সংশোধনীটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন অভিযোগে উচ্চ আদালতে মামলা হয়।  আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম শাসনামলে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের আদেশে এই সংশোধনীটি বাতিল হয়। তবে সেসময় থেকেই ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ‘ সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার ছিল বিএনপি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক শব্দটি বাদ দিয়ে ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি তোলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবার ‘নির্দলীয়’ শব্দটিও বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়েছে দলটি। যদিও গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিটিই এ মুহূর্তে প্রধান দাবি বিএনপির।

 

আরও পড়ুন: এমন কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে বিশেষ সরকারের প্রয়োজন: কাদের