কর্মসূচি দিলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য নির্বাচন

বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ শেষে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা (ছবি নাসিরুল ইসলাম)ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপে বসে কোনও ফল না এলেও ন্যূনতম দাবি আদায়ে এখনও অনড় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করার সিদ্ধান্ত অটল রয়েছে এই জোটটি। জোট  নেতারা বলছেন, সরকার নূন্যতম দাবি মানলেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন তারা।

৬ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ‘তফসিল ঘোষণার পর’ রাজশাহীর উদ্দেশে রোডমার্চের ঘোষণা দিলেও বুধবার সন্ধ্যায় তা বাতিলের ঘোষণা দেন ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনকে বানচাল করে এমন কোনও কর্মসূচি বা আন্দোলনের দিতে তারা যাবেন না। সেক্ষেত্রে সারাদেশে জনসভাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। গত ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করায় কিছুটা অসন্তোষ ছড়ায় ঐক্যফ্রন্টে।

ফ্রন্টের নেতারা বলছেন, রোডমার্চ বাস্তবায়িত করতে হলে যে সক্ষমতা থাকতে হয়, তা এখনও অর্জন করেনি ঐক্যফ্রন্ট। এক্ষেত্রে বরং পথে-পথে বাধা আসবে। আটক-গ্রেফতার হবেন নেতাকর্মীরা।

পরে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের ফোনালাপের মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান আসে বুধবার সন্ধ্যার পর। গুলশানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, যে রোডমার্চ বাতিল করা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার (৭ নভেম্বর) সকালে গণভবনে যে সংলাপ হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় এই আলোচনায় কোনও ফল না এলেও ফ্রন্টের নেতারা সংলাপে পরিষ্কার করেছেন, সরকার চাইলেই বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষে নির্বাচন দিতে পারে। এক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সহযোগিতাও থাকবে, এমন মন্তব্যও করেছেন কোনও-কোনও নেতা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কেউ-ই ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি’  হিসেবে দেখলেও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট এখনও পরবর্তী বৈঠক করেনি। সেটা করার পর নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে আমি মনে করি, আমাদের সারাদেশে জনসভা করতে হবে। নির্বাচন করতে হবে। জনগণকে আহ্বান জানাতে হবে যে, তারাও যেন রাস্তায় থাকে, ভোটকেন্দ্রে থাকে। তাহলে ভোট অনেকাংশে সুষ্ঠু হবে।’ বুধবার সংলাপশেষে ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনও বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থা হোক, সেটাই আমরা চাচ্ছি।’

ফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজশাহীর সমাবেশের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই মন্তব্য আবদুল মালেক রতনের। তবে ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনকে বর্জন করার দিকে যায়, এমন কোনও কর্মসূচি দেবো না আমরা।’

এদিকে, প্রধামন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে কী ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সংলাপে আশাব্যঞ্জক কিছু আসেনি। তাই দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ শেষে বুধবার (৭ নভেম্বর) গুলাশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে সাড়ে ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সবাই একটি বিষয়ে একমত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার একটি দাবিও মেনে নেয়নি। এখন দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই। তবে তবে আগামীতে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে আগামী শুক্রবারের (৯ নভেম্বর) রাজশাহী জনসভা শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা, এই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে সবাই অভিমত দিয়েছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা, তার সিদ্ধান্ত নেবেন দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। নির্বাচন নিয়ে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, বিএনপি তা মেনে নেবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৭ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘সংলাপে থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ফলে এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে মনে করে বিএনপি। রাজশাহীর জনসভার পরে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে।’