একতরফা তফসিল বাতিলের দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

নির্বাচন কমিশনের একতরফা তফসিল বাতিলের দাবিতে বাম দলগুলোর বিক্ষোভ

নির্বাচন কমিশনের একতরফা তফসিল বাতিল করে সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। শনিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্বাচনি তফসিল বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ২০১৪ সালের মতো আবার যদি নির্বাচন হয়,দেশের জনগণের স্বাধীনতা ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আরও একটি কালো অধ্যায় রচিত হবে।

তিনি বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা টকশোতে আমাকে বলেছেন এই নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনও চিন্তা নেই। সরকার চিন্তা করছে ২০২৩ সালের নির্বাচন নিয়ে। এ থেকে বোঝা যায় এ নির্বাচনের ফলাফল হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সে আনুষ্ঠানিকতা করার জন্য নির্বাচনের জন্য সরকার তাড়াহুড়া করে তফসিল ঘোষণা করিয়েছে।

গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আওয়ামী লীগের এই দখলদারিত্বের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার একদিকে বলছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। অন্যদিকে, তারা আগে থেকেই তাদের জয় ঘোষণা করে রেখেছে। আর সেটাকে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে সার্টিফিকেট দিতে হবে। এই হচ্ছে বর্তমান।

বর্তমান সরকার বারবার সংবিধানের দোহাই দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের জন্য যা কিছু দরকার তার সবই সংবিধানের মাধ্যমে করা যায়। কেননা সংবিধান সংসদের একটি পরিপূরক ব্যাপার। তাই ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা যায়। এতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে। আর যদি তা না করে বারবার তারা সংবিধানের দোহাই দেয়, তাহলে জনগণ আপনাদেরকে স্বৈরাচারী শাসকের ইতিহাসে স্থান দেবে।' তিনি আরও বলেন, 'সংলাপের আয়োজন দেখে আমরা ভেবেছিলাম সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। আমরাও সংলাপে গিয়েছি ও পরিষ্কার করে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সংসদীয় নিয়ম অনুসারে যায় না। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ শহীদের রক্তের ইতিহাসে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের এরকম একটি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা দেখতে চাই না। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় যায় তারাই স্বৈরশাসনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ক্ষমতাকে জমিদারিতে পরিণত করে। এই ধরনের সকল ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ৫ দফা সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। নির্বাচন পদ্ধতি কী রকম হবে সে ব্যাপারে ৮ দফা প্রস্তাব করেছি। প্রধানমন্ত্রী বললেন, এইসব দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের কী মতামত সেগুলো সংবাদ সম্মেলন করে বলবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই সংবাদ সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেল। সংলাপের বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিলেন সেগুলো না জানিয়ে তড়িঘড়ি করেই এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তফসিল ঘোষণা করিয়ে দিলেন। নির্বাচনের এখনও ৮০ দিন সময় রয়েছে। আপদকালীন সময় যদি ২০ দিন রাখা হয় তারপরও তফসিল ঘোষণার জন্য দুই সপ্তাহ সময় পাওয়া যাবে। অথচ সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি সমঝোতায় না গিয়ে তড়িঘড়ি করে এই তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, বিদ্যমান সরকার ও আওয়ামী লীগ নিজেরাই সংলাপকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন,আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করবো। জনগণের দাবি প্রচেষ্টায় আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার ন্যূনতম সমঝোতায় না আসছে। এই সংলাপই আমাদের আন্দোলনের ফসল।