বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। সকালের দিকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম থাকলেও ১২টার পর থেকে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে থাকেন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী নেতা ও তাদের সমর্থকরা।
মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের মিছিলের পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীদের ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত মিছিল করতে দেখা গেছে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম রহমান হলের সদস্য সচিব মোমিনুল ইসলাম জিসান বলেন, ‘গতকালের (বুধবার) ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে।’
এদিকে অন্য সময় পুলিশ সদস্যরা বিএনপির কার্যালয়ের পাশে হোটেল মিড়ওয়ের সামনে অবস্থান করলেও আজকে তাদের সেখান থেকে সরে এসে নাইটিংগেল মোড়ে স্কাউট মার্কেটের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
গতকাল (বুধবার) ১৪ নভেম্বর রাস্তা বন্ধ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে অবস্থান নিতে বলে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তা না ছাড়লে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনের রাস্তার একটা অংশ গাড়ি চলাচলের জন্য ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।
মিছিল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহকারীর পক্ষে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও স্লোগান দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
যশোর-২ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে এসেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। তিনি শতাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। যশোর থেকে আসা সুমন মোল্লা বলেন, সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের জেলা যশোর। এই জেলায় বিএনপির অবস্থা ভালো। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির প্রার্থীরা সেখানে জয়লাভ করবে।
সুমন মোল্লার মতো বিএনপির নেতাকর্মীদের আশা, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির নেতৃত্বধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে। এছাড়া দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বিএনপির জয় অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। কারণ, তাকে কাছে পেলে নেতাকর্মীরা এখনকার চাইতে আরও অনেক বেশি উজ্জীবিত হয়ে নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। তখন সরকার চাইলেও কোনও অনিয়ম করতে পারবে না।
গত ১২ নভেম্বর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বিএনপি, যা চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিন বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১, বগুড়া-৬ এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত তিন দিনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে আগ্রহী প্রায় চার হাজার জন বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলটির সিনিয়র প্রায় সব নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
বিএনপির মনোনয়ন ফরমের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে জমা দেওয়ার সময় জামানত হিসেবে দিতে হচ্ছে আরও ২৫ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তারিখ আবারও পেছানোর জন্য গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন জোটের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধি দল।