সাংবিধানিক সংস্কার-জাতীয় সম্পদ রক্ষার ঘোষণা থাকবে বামজোটের ইশতেহারে

নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের সম্ভাব্য ইশতেহারে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিরসনে সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়টি থাকার পাশাপাশি দেশের জাতীয় সম্পদরক্ষার নিশ্চয়তাও দেওয়া হবে। জোটের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।   

গণতান্ত্রিক বাম জোটে ৮টি বাম-গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দল আছে। গত ১৮ জুলাই ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোটের দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

ইতোমধ্যে জোটের পক্ষ থেকে একটি ইশতেহার কমিটি গঠন করা হয়েছে। জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক ছাড়াও এই কমিটিতে আছেন শাহ আলম, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বজলুর রশীদ ফিরোজ, ফিরোজ আহমেদ, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক। আগামী সোমবার (১৯ নভেম্বর) জোটের ইশতেহার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে ইশতেহারের সম্ভাব্য বিষয়গুলো।

বামজোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইশতেহারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর পরিস্থিতি বর্ণনা ও সমাধানের প্রতিশ্রুতি থাকবে। থাকবে খাতওয়ারি প্রতিশ্রুতিও। ইশতেহারের ওপর একটি বুকলেট ও সংক্ষিপ্তাসার দিয়ে একটি লিফলেট করা হবে। জোটের কোনও-কোনও শরিক দল জোটগত ও দলীয়-দুভাবেই ইশতেহার তৈরি করবে। 

জানতে চাইলে বামজোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখনও ইশতেহার নিয়ে বসিনি। প্রাথমিকভাবে চিন্তা করছি। প্রত্যেকেই তাদের দলীয় চিন্তার সমন্বয় করে কমিটিতে বসবেন।’

বামনেতারা জানান, ইশতেহারে রাজনৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকরণে সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচনি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, ‘কালো আইনগুলো’ বাতিল, যেমন ডিজিটাল আইন; রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ,  হত্যাকাণ্ড বন্ধে প্রতিশ্রুতি থাকবে। এছাড়া, অর্থনৈতিক বিষয়ে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ, অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্যবন্ধ, ব্যাংকচুরি, অযাচিত ঋণবন্ধসহ নানা বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ও সমাধানের চিন্তা দেওয়া থাকবে ইশতেহারে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করণে প্রতিশ্রুতি দেবে বাম জোট। এই প্রতিশ্রুতিগুলোর সমাধান দুইভাবে দেবে বামজোট। সমাধান স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সময় ধরে দেওয়া হবে।

বাম জোটের ইশতেহারে থাকবে খাতওয়ারি প্রতিশ্রুতি ও সমাধান দেওয়ার চেষ্টা। এই খাতগুলোতে শিক্ষা, বাসস্থান, খেলাধুলা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, শ্রমিক-অধিকার, যোগাযোগসহ আরও কিছু বিষয় থাকবে।  

ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকবে জাতীয় সম্পদরক্ষা ও চুক্তি বাতিল সম্পর্কিত। দেশের স্বার্থবিরোধী যে চুক্তিগুলো আছে, সে বিষয়গুলোকে ইশতেহারে যুক্ত করবে বাম জোট।

জোটের সমন্বয়ক ও ইশতেহার কমিটির সদস্য সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থবিরোধী যেসব চুক্তি আছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে সুন্দরবন চুক্তি—এসব বাতিল করার প্রতিশ্রুতি থাকবে ইশতেহারে। জাতীয় সম্পদ তেল-গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে ইশতেহারে বক্তব্য থাকবে।’

বামজোটের নেতারা বলছেন, এই ক্ষেত্রেও দু’টি পথ দেওয়া হবে ইশতেহারে। একটি স্বল্পমেয়াদি ও আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্প মেয়াদে রূপপুর ও রামপাল চুক্তি বাতিলের বিষয়টি ইশতেহারে রাখা হবে। দেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখা হবে ইশতেহারে।

জোটের অন্যতম নেতা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য নতুন জাতীয় মুক্তির রূপরেখা থাকবে ইশতেহারে। এটা অগ্রাধিকারভাবে পাবে। তরুণদের সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দেবো।’

 উৎপাদন ক্ষেত্রগুলো, সব শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের বেঁচে থাকার এবং জীবনের যে অধিকার, জীবনের যে মর্যাদা তার নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টাও ইশতেহারে থাকবে বলে জানান জোনায়েদ সাকি।