রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৩৬ বছর

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন পূর্ণ হয়েছে ৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজা হওয়ায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। তার ৩৬ বছর রাজনৈতিক জীবনে দেশ ও জাতির প্রতি অবদানের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  

রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) বিএনপি’র চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন পূর্ণ হলো। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেন। এর দুই মাসের মধ্যে গণতন্ত্র হত্যা করে হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবারও বন্ধ হলো বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়া। কণ্ঠরোধ করা হলো জনগণের। জাতীয় জীবনের ওপর দুঃসময় নেমে এলো। এরকমই এক ক্রান্তিকালে শুরু হয়েছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে বেগম জিয়ার অবদান বীরুত্বগাঁথা। সেই সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে তিনি জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে একক ও অনন্য নেতৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হন।’

রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছরের সংগ্রামে, সংকটে আপোষহীন ধারায় জনগণের সঙ্গে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। শুরু হয় গণতন্ত্রের পথ চলা।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চক্র এই মহান জাতীয়তাবাদী নেত্রীর উত্থান সহ্য করতে পারেনি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে যিনি আগলে রেখেছিলেন অতন্ত্র প্রহরীর মতো, তাকে পর্যুদস্ত করার জন্য চক্রান্তকারীরা চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে। ভোটার শূন্য নির্বাচনে বিদেশি মদদপুষ্ট ফ্যাসিবাদী শক্তি গণতন্ত্রকে দাফন করতে; খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রেখে জুলুমের পর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন— বিনা চিকিৎসা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিকটজনদের সাক্ষাৎ করতে না দিয়ে, নানা ফন্দি-ফিকির করে বিলম্ব করা হচ্ছে। মূলত সাত দিন পরপর আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করার কথা। অথচ খালেদা জিয়ার জন্য কারাকর্তৃপক্ষ ১৫ দিন পরপর সাক্ষাতের বিধান করেছে। এবারে ২০/২১ দিন অতিবাহিত হলেও দেশনেত্রীর সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি।

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, দলের সিনিয়র নেতারা ও দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বিগত চার মাস যাবৎ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মহাজালিয়াতির নির্বাচনের পর অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আরও বেশি নিষ্ঠুর বেপরোয়া ও উদ্ধত হয়ে উঠেছে। মিথ্যা জয়ের গরিমায় ধরাকে সরা জ্ঞান না করার পর্যায়ে তারা পৌঁছেছে। দেশটা এখন জনগণের নয়, দেশ এখন আওয়ামী লীগের একক তালুকদারীতে পরিণত হয়েছে। তাই সরকার বিদ্বেষ ও উগ্রতা দিয়ে  বেগম জিয়াকে জুলুম ও নাজেহাল করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। খালেদা জিয়ার ওপর সরকারি জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ আঁচ করতে না পারলেও তা যেকোনও মুহূর্তে প্রবল ঘূর্ণিতে টনের্ডোর আঘাত আসবে, তা তারা টের পাচ্ছে না।

রিজভী জানান, সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন আদালতে জামিন নিতে আসলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।