সরকার পদত্যাগ করলে ‘পরিণতি’ আমরা বিবেচনা করবো: শামসুজ্জামান দুদু

বক্তব্য রাখছেন শামসুজ্জামান দুদুবিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সরকার পদত্যাগ করলে ‘পরিণতি’ জেলের ভেতরে হবে না বাইরে, সেটা আমরা বিবেচনা করবো। সোমবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী চালক দলের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র: আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে দুদু বলেন, ‘আপনার সরকার কিংবা আপনি যদি পদত্যাগপত্র দেন, তাহলে আমরা ভেবে দেখবো আপনাদের পরিণতি জেলে হবে, না বাইরে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্মানজনক পথ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়ার আর কিছু নাই। চোরের কাছে কী চাইবো? ভোট চোর, অর্থ চোর, ব্যাংক চোর, আপনাদের কাছে কী চাইবো? হ্যাঁ, দুদিন দেরি হতে পারে, কিন্তু আইয়ুব খান, হিটলার, মুসোলিনি এরা কোনও সম্মানের পাত্র না, আপনি দিন দিন সেদিকেই এগুচ্ছেন। সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়ে গণতন্ত্রের সবক দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এত সহজ কাজ না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আপনি বারবার বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। তাহলে ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছিল কী জন্য? দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিল কিসের জন্য? রাতে ভোট হবে এজন্য? আমি জানি না আপনার বিদায়টা কীভাবে হবে? আপনার পরিণতির কথা ভাবতে আমি শিউরে উঠি। কারণ, এ দেশের রাজনীতি ৪০-৫০ বছর ধরে আমরা দেখেছি তো। শেখ মুজিবুর রহমান কোনও ছোট মাপের নেতা ছিলেন না, যত বিতর্কই থাক, তিনি খুব বড় মাপের নেতা ছিলেন। জিয়াউর রহমানের মতো নেতা বাংলাদেশে শতাব্দীতে আর একজন জন্মাবে কিনা সন্দেহ আছে। কেন এ কথা বলছি আমি, কারণ আমরা রক্ষা করতে পারিনি। কখন কোথা থেকে আক্রমণটা আসবে। প্রধানমন্ত্রী, আপনি ভাবছেন খুব সুরক্ষা অবস্থায় আছেন। গণবিপ্লব যদি হয়ে যায় রাস্তায়, পদত্যাগ করা ছাড়া আপনার কোনও পথ থাকবে না।’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় দুদু বলেন, ‘‘একসময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল। এখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে এটা দাবি করা যাবে না। যারা রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন, তারা জানেন গণতন্ত্রের কিছু শর্ত থাকে। তার মধ্যে একটি শর্ত হলো— জনগণের ভোটের অধিকার। বাংলাদেশে এখন নির্বাচন বলে কিছু নাই। কিন্তু নির্বাচনের জন্য একটি কমিশন আছে। সেখানে কিছু ‘ভাঁড়’ বসে আছে। গোপাল ভাঁড়ের প্রতিনিধি বসে আছে নির্বাচন কমিশনে। তারা যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় লজ্জায় মুখ ঢাকবে। আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অপার ভূমিকা রেখেছে। সেই পুলিশ বাহিনী এখন সরকারের একেবারে এক নম্বর ‘লিটল বাহিনী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’

প্রশাসনের এত খারাপ ন্যক্কারজনক ভূমিকা গত ৪৭ বছরে লক্ষ করিনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ডিসি-এসপি-টিএনও মিলে রাতে ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে নির্বাচনে সেন্টারে যেতে নিষেধ করেন এবং রাতেই ভোট শেষ করে দেয়, আর নির্বাচন কমিশন বলে ইভিএম থাকলে রাতে সিল মারা হতো না, দিনে হতো। এরা মানুষ না জানোয়ার!’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন কবিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিএম শাজাহানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, জিনাফ সভাপতি ও কৃষক দলের সদস্য লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি ও কৃষক দলের সদস্য কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মানিক তালুকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিলন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল খন্দকার প্রমুখ।