ঐক্যফ্রন্টে স্বস্তি ফিরছে, তৎপর বিএনপি

জাতীয়-ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপি

একাদশ জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কোনও কর্মসূচি না থাকা এবং বিএনপির সংসদে যোগদান নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের ভেতরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া ও কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামের মধ্য দিয়ে ফ্রন্টের অভ্যন্তরে যে ধরনের অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল, এবার সেই অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ শরিক দলের নেতাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে উষ্ণ হচ্ছে। ফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ অস্বস্তি কমাতে তৎপর হয়েছে বিএনপিও। দলটির পরামর্শে আ স ম আবদুর রব শনিবার (৭ জুন) ডেকেছেন বিশেষ বৈঠক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক শীর্ষ নেতা এসব তথ্য জানান।

ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ১২ জুন বৈঠক ডাকা হলেও পরে তা এগিয়ে ১০ জুন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন। ওই বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের বিগত দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণী আলোচনা হবে। এর আগে আগামীকাল শনিবার (৮ জুন) বিএনপিকে বাদ দিয়ে ফ্রন্টের বাকি চার দলের একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। আ স ম রবের আহ্বানে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে শরিকদের প্রশ্ন ও অবস্থান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় আনা হবে। কামাল হোসেনের চেম্বারে সকাল ১১টায় বৈঠকটি শুরু হতে পারে।

আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘শরিক দলগুলোর মধ্যে সরাসরি কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। কিছু কিছু ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সে বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করবো। গত নির্বাচনের পর থেকে ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য আছে, সেগুলো মূল মিটিংয়ের আগে আলোচনা করবো।’

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ শরিকের মধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কামাল হোসেন তার দলের কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছেন, কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে, এতে তিনি সন্তুষ্ট।

এ বিষয়ে গণফোরামের মিডিয়া সমন্বয়ক লতিফুর বারী হামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ১২ জুন ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন। ইতোমধ্যে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে স্যারের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন আলোচনা সন্তোষজনক।’

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১২ জুন বৈঠকের আগে শনিবার (৮ জুন) কামাল হোসেনের চেম্বারে একটি প্রিলিমিনারি বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ফ্রন্টের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা থাকতে পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আজকে ঠাকুরগাঁওয়ে আছেন। তিনি কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে আমি জানি না।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একাধিক নেতা জানান, গত ৯ মে কাদের সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্টকে ৮ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। এরমধ্যে ফ্রন্টের সন্তোষজনক জবাব না পেলে তিনি ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন। যদিও এই আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ঈদের আগের রাতে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের আহ্বানে তার বেইলি রোডের বাসায় যান কাদের সিদ্দিকী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির সংসদে যোগদান, বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ, গণফোরামের মোকাব্বির খানকে তাদের বিশেষ কাউন্সিলে অংশ নিতে দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলোয় আমরা প্রশ্ন রেখেছি। আমরা জানি না এসব সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টের নাকি বিএনপির। সেই কারণে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সব শীর্ষ নেতাদের আমাদের প্রশ্নগুলো সম্পর্কে জানিয়েছি।’

অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘তাদের কাছে আমরা আমাদের দলের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়েছি। কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শিগগিরই বৈঠক করে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আমরা তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি। আলোচনায় ব্যাখ্যা যুক্তিযুক্ত হলে নিশ্চয়ই আমরা ঐক্যফ্রন্টে থাকবো। এখানে কোনও গ্যাপ আছে কিনা, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কিনা, আলোচনা করা হলে নিশ্চয়ই তাও বেরিয়ে আসবে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখতে বিএনপির আন্তরিকতার কমতি নেই। এ বিষয়ে কামাল হোসেনও ইতিবাচক। ঈদের পরদিন দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানান। ডিসেম্বরের মধ্যে ফল আনতেও তাগাদা দেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গত সোমবার (৩ জুন) ফ্রন্টের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে কাদের সিদ্দিকীকে ফ্রন্টে রাখার বিষয়ে জরুরি আলোচনাও সেরেছেন তারা।

জেএসডির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মূলত বিএনপির পরামর্শেই ঐক্যফ্রন্টের প্রিলিমিনারি বৈঠক হচ্ছে বিএনপিকে ছাড়া। আ স ম রব এর সমন্বয় করছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা মনে করেন, নির্বাচনের পর বিএনপির ন্যূনতম কর্মসূচি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কর্মসূচিহীন ফ্রন্টকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে, এমন অভিযোগ আছে বিএনপির বিরুদ্ধে। যদিও দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে সংগঠিত আকারে কর্মসূচির দিকে যেতে।

গণফোরামের একাধিক নেতা বলেন, ‘বিএনপির উচিত হবে অন্ততপক্ষে নাগরিক সমস্যাবলি নিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

তবে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রভাবশালী এক নেতা জানান, বিএনপিকে বাদ দিয়ে প্রিলিমিনারি মিটিংয়ের কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং গণফোরাম ও বিএনপি যেহেতু সংসদে গেছে, তাদের বাদ দিয়ে বাকি তিন দল আলোচনা করে একটা অবস্থানে আসতো পারতো।