দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে একসময় দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন সাবেক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাশ্মির ও জম্মু যদি ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় তবে পাকিস্তানের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে ভারতের আর কোনও আলোচনা করতে হবে না।’
এর ফলে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে পারবে ভারত। কারণ, একদিকে যেমন কাশ্মিরের একীভূতকরণ সম্ভব হবে আবার অন্যদিকে পাকিস্তানকেও এ বিষয়ে কোণঠাসা করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ’সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মির বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে এ ধরনের কথাও ভারতকে আর শুনতে হবে না।’
নির্বাচনের সময়ে বিজেপি সংবিধানে কাশ্মির সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা রদ করা হবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জয়ী হয়ে সরকার গঠনের তিন মাসের মধ্যেই এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করলো দলটি।
ভারতে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অন্য একটি দূতাবাসে উঁচু পদে কর্মরত রয়েছেন এমন একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ’এখানে ঝুঁকি অনেক বেশি এবং যারা এই ঝুঁকি নিয়েছেন তারা চিন্তা-ভাবনা করেই নিয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এটি অত্যন্ত বড় ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ। কারণ, এটি সফল হলে ভারত অনেক লাভবান হবে আবার পদক্ষেপ ধীরগতিতে এগুলে সমস্যারও উদ্ভব হতে পারে।
তিনি বলেন, ’সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এর ফলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে এবং উগ্রবাদ জন্ম নিতে পারে।’
তার আশঙ্কা, ’অনেক শক্তি আছে যারা এই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইবে যা ভারতের জন্য ভালো নাও হতে পারে।’
তবে ভারত প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে এবং এখন দেখার দরকার তারা একীভূতকরণের বিষয়টা কতটা সহজভাবে করতে পারে, মন্তব্য তার।
প্রসঙ্গত: সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবিধানের যে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে কাশ্মিরকে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেটি বাতিল তথা স্বায়ত্তশাসন বাতিল ও কাশ্মির ভেঙে দুই ভাগ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এতে স্বাক্ষর করেছেন।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে কাশ্মিরের সাবেক ও সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে ভারতকে কাশ্মিরের দখলদার বাহিনী হিসেবে প্রমাণ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্বায়ত্তশাসন বাতিল, রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার এবং কাশ্মির ভেঙে দুই টুকরো করার ঘোষণা দেওয়ার আগেই অঞ্চলটিতে ব্যাপক সামরিক সমাবেশ করে ভারত। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলে গত সপ্তাহে কাশ্মিরে আধা সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর এসব বাড়তি সদস্যদের রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর এবং কাশ্মির উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে এমনকি গ্রামাঞ্চলেও মোতায়েন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই কাশ্মিরের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ। রবিবার রাত থেকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রেখেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও নিজ বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রয়েছেন সেখানকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও পিপলস কনফারেন্স পার্টির চেয়ারম্যান সাজাদ লোন। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে শ্রীনগর জেলায়।