রংপুর বিভাগ ও জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এই নির্বাচন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আগ্রহ কম। তাদের অভিযোগ, গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি প্রচারণায় শুরু। কিন্তু নির্বাচনি প্রচারণার ১২ দিন পার হয়ে গেলেও ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কোনও নেতা রংপুরে যাননি। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় নেতাদেরও আগ্রহ নেই। তবে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রচারণায় অংশ নিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রংপুরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
রংপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান সামু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের প্রচারণায় অংশ নিতে বলা হয়েছে, আমরাও অংশ নিচ্ছি। এর বাইরে আমাদের প্রতি আর কোনও নির্দেশনা নেই। এখন পর্যন্ত ঢাকা থেকে কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে আসেননি।’
প্রার্থী রিটা রহমান বলেন, ‘বড় দলের মধ্যে কিছুটা বিভেদ থাকে। শুরুর দিকে তার কিছুটা প্রভাব ছিল। তবে এখন আমরা সবকিছু ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনও কেন্দ্রীয় নেতা না এলেও আজ প্রচারণায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এসেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর মির্জা ফখরুল আসবেন প্রচারণায় অংশ নিতে।’
বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিটা রহমানের পক্ষে নির্বাচনে প্রধান সমন্বয়নকারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। কিন্তু তিনি ১০ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে, নির্বাচন সমন্বয় টিমের সদস্য রংপুর বিভাগ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাকদ আসাদুল হাবিব দুদু খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে আসাদুল হাবিব দুদু বলেন, ‘নির্বাচনে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে। তবে, তার অনুপস্থিতিতে আমি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নম্বরে ফোন করা হলে রিসিভ করেন আবদুল্লা আল কায়েস নামে একজন। তিনি নিজেকে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দেন। কায়েস বলেন, ‘গত ১০ সেপ্টেম্বর টুকু ভাই আমেরিকায় গেছেন। আগামীকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশে ফেরার কথা রয়েছে।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় রিটা রহমানের সঙ্গে ছিল না স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। রিটা রহমানের স্বামীর বিরুদ্ধে জাতীয় চার নেতা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
তবে, ওই দিন রিটা রহমান বলেন, ‘আমার স্বামী মেজর খায়রুজ্জামান কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার আসামি হলেও নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আমার স্বামী মামলার আসামি ছিলেন এটা সত্যি। তবে, এ জন্য আমাদের খুনি বলা ঠিক নয়।’ তার সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা না থাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করতে এসেছি, যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনকে শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ আসনে উপনির্বাচনে জাপার পক্ষে থেকে অংশ নিচ্ছেন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ।
নির্বাচন প্রসঙ্গে আসাদুল হাবিব দুদু বলেন, ‘গত ২৯ তারিখ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপরও আমরা নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এছাড়া, আমরা ইভিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি, অথচ এখানে নির্বাচন হবে ইভিএমে। ফলে ভোটের ফল কী হবে, জনগণ আগে থেকেই বুঝতে পারছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার রংপুর-৩ আসনে জাপা প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে চায়। এ কারণে সরকার নিজ দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বসিয়ে দিয়েছে। এছাড়া নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকে রিটা রহমানকে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়ে আসছে।
রিটা রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। জাপা পথসভার কথা বলে সমাবেশ করছে আর আমরা কোথাও পথসভায় শামিয়ানা টানালে প্রশাসনের লোকজন খুলে নিয়ে যাচ্ছে।’
রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। কিন্তু মানুষের সন্দেহ ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা। সরকার জাপাকে এ আসন দিতে চায় বলেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।