জামায়াতের নতুন আমির ডা. শফিকুর

ডা. শফিকুর রহমান ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠনের সদস্যদের (রুকন) প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জামায়াতের প্রচার বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আজ (মঙ্গলবার) নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে।

দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক দায়িত্বশীল জানান, গত ১০ নভেম্বর রুকনদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে তা গতকাল সোমবার (১১ নভেম্বর) গণনা শুরু হয়। নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি ভোটে জিতেছেন তিনি। এর আগে, গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্যানেল-আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৪ অক্টোবর সেই ভোট গণনা হলে সেখানেও জামায়াতের আমির হিসেবে প্যানেলে ডা. শফিকুর এগিয়ে ছিলেন। 

জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, সারাদেশে তাদের প্রায় ৪৫ হাজার রুকন রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার নারী। এই নারীদের ভোটে শফিকুর রহমান এগিয়ে যান।

জানতে চাইলে জামায়াতের ইউরোপ শাখার মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারায় গর্ব করার মতো বিষয় হলো, কোনও ধরনের বংশ-গোষ্ঠী বা অঞ্চলের ভিত্তিতে নয়, সম্পূর্ণভাবে সব রুকন-মেম্বারের মতামতের ভিত্তিতেই আমির নির্বাচিত হন। এভাবেই জামায়াতের আমির নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ 

জামায়াতের একাধিক প্রভাবশালী সূত্র জানায়, আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এখন নতুন আমির শপথগ্রহণ করবেন। এই শপথের পর তিনি দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এরপর নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করবেন।

জামায়াতের নতুন আমিরের ঘনিষ্ঠ একাধিক দায়িত্বশীল জানান, সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে এখন পর্যন্ত চার জনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তারা হলেন, বর্তমান নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, রফিকুল ইসলাম খান, এটিএম মাসুম, হামিদুর রহমান আজাদ। এই চার জনের মধ্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার সাবেক এমপি ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে পরিচিত। তবে নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের কেউ কেউ এগিয়ে রাখছেন রফিকুল ইসলাম খানকে।

সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের ঢাকার একটি অঞ্চল-প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ পদে বর্তমানে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম অনেকটাই চূড়ান্ত। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে তিনি প্রথমে আছেন। তার সম্ভাবনা বেশি।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হন। ডা. শফিক ১৯৮৬ থেকে ’৮৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ’৯১ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এবং ১৯৯১ থেকে ৯৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমির, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন। ২০১৭ থেকে বর্তমান মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তার দুই মেয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন এবং একমাত্র ছেলে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র।