গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন বলেও উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী।
এর সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জা ফখরুলের ফোনের বিষয়টি ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে আইনগত উল্লেখ করে আইনি প্রক্রিয়াতেই এটা সমাধানের পক্ষে মত দেন। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ইস্যুটি নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
তবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি নেতাদের দাবি অনুযায়ী খালেদা জিয়া যদি সত্যিই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে থাকেন তবে তিনি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু সেটাও হতে হবে আদালতে। কীভাবে হবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা ঠিক করবেন আদালত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দণ্ডিত কোনও অপরাধী চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে প্যারোলে জামিন পেলেও পেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কী কী শর্তে তিনি জামিন পাবেন, তাও নির্ধারণ করে দেবেন আদালত।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, খালেদা জিয়া ইস্যুতে বিএনপি একেক সময় একেক কথা বলছে। তারা কখনও আন্দোলনের কথা বলছে, কখনও মুক্তির কথা বলছে। কখনও জামিনের কথা বলছে, আবার তার মুক্তি চেয়ে ফোনও করেছে। বিষয়গুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক। তারা আসলে স্থির কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, বরং খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায়ে দণ্ড হওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিতে চাইছে। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারকে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে হবে তারা আসলে কী চায়? সে অনুযায়ী নিয়ম-কানুন মেনে তারা আদালতে আবেদন করতে পারে। অথবা অপরাধ স্বীকার করে মানবিক কারণে মুক্তি চেয়ে আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন চেয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আর এদিনই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের করা খালেদা জিয়ার জামিন সংক্রান্ত প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেক বড়। অনেক কাজ সামনে। খালেদা জিয়ার বিষয় নিয়ে বারবার উত্তর দেওয়ার মতো সময় নেই।’
যদিও বিএনপি নেতা ও পরিবারের দিক থেকে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখার আর্জি জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে, পর্দার আড়ালে তার মুক্তির বিষয়ে কথা চলছে। তবে সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, পর্দার আড়ালে কোনও আলোচনা হয়নি, হচ্ছেও না। সরকার বা আওয়ামী লীগ আইনি প্রশ্নে অনমনীয়, অনড়। যদি খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে আবেদন করেন, সেটা বিবেচিত হতে পারে। আর তা না হলে যা কিছু হবে আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে। সেটা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি চাইলেও প্রযোজ্য শর্তগুলো পূরণ করেই তা পেতে হবে।
এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তারা গত কয়েকদিনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, আইনের বাইরে খালেদা জিয়ার মুক্তির একটিই পথ, তা হলো অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুক্তির আবেদন করা। এখন বিএনপি কী করবে, সেটা তাদের বিষয়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন রাজনৈতিক কোনও ইস্যু নয়। স্বাভাবিকভাবেই এটি নিয়ে দলে কোনও আলোচনা হওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি নেতা ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উনি মারাত্মক অসুস্থ, কিন্তু এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথভাবেই তার চিকিৎসা চলছে। দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে, এমন পরিস্থিতি এখনও হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তবে এরপরও আদালত যদি মনে করেন জামিন দেবেন, না মনে করলে দেবেন না। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে, সেখানেও অনেক শর্ত আছে। সব শর্ত পূরণ করে এবং বিদ্যমান বিধিবিধান মেনে প্যারোলের আবেদন তারা করতেই পারে। আদালত প্রয়োজন মনে করলে মঞ্জুর করবেন।’