গত মার্চ মাসে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার মুজিববর্ষের জনসমাগমপূর্ণ সব কর্মসূচি স্থগিত করে। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগও জনসমাগমের কর্মসূচি পরিহার করে চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যেসব কর্মসূচি পালন করা যায় শুধু সেগুলোই চলমান থাকে। ফলে একেবারেই সীমিত হয়ে পড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম। মুজিববর্ষের কর্মসূচি স্থগিতের পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করা হয় সীমিত আকারে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্যাপক জাঁকজমক ও আনন্দ-উদ্দীপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ইচ্ছে থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি। এমনকি মুজিববর্ষে প্রতি জেলা থেকে দলের দু’জন প্রবীণ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনাও স্থগিত করা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার সংক্রমণকালে সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে কারণে জনসমাগম হয় এমন কর্মসূচি পরিহার এবং ক্ষেত্রবিশেষে স্থগিত করা হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও সীমিতভাবে পালন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসকরা সংক্রমণ রোধে সবাইকে তা অনুসরণ করার অনুরোধ করেছেন।
সমান-তালে দলীয় কার্যক্রমও শুরু হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে কাজ হারাতে শুরু করেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। অর্থনৈতিক দুর্দশায় পতিত হয়ে তাদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগ। যা সমন্বয় করা হয় জুম বৈঠক বা ডিজিটাল কনফারেন্সের মাধ্যমে। আবার করোনায় সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের অনুষ্ঠানও চলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য জুম মিটিং শুরু করেন। মাঝে-মধ্যেই শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে সেখান থেকে জুমের মাধ্যমে বা ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কিংবা মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় ব্রিফিং সারছেন অনলাইনে। অনলাইন প্রযুক্তিতে দলের বক্তব্য তুলে ধরছেন। এদিকে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং, ভিডিও কনফারেন্স ও জুম বৈঠকের মাধ্যমে ব্রিফিং, উদ্বোধন এবং বৈঠকের কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের বৃক্ষরোপণের কাজও অনেকটা চলছে ডিজিটালি। দলটির বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বৃক্ষরোপণের অধিকাংশ কর্মসূচিতে সরাসরি উপস্থিত থাকলেও অতিথিরা ভিডিও কনফারেন্সেই এসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন। আর সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত হতে না পারলে ভিডিও কনফারেন্সেই প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দিচ্ছেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (৩ জুন) মহিলা আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের কমিটিতে নারী কোটা বিষয়ে একটি সেমিনার করে জুম পদ্ধতিতে। এতে অংশ নেন সংশ্লিষ্ট অতিথিরা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিকল্প পদ্ধতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। খুব সীমিত লোকের উপস্থিতিতে এবং জুম বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অন্যরা তাতে অংশ নিচ্ছেন। দলের সভাপতি তার সরকারি ও দলীয় কার্যক্রমও চালাচ্ছেন ডিজিটাল মাধ্যমেই। অন্যান্য নেতাও এ মাধ্যমেই সক্রিয় আছেন। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিন ডিজিটাল পদ্ধতিতেই কার্যক্রম চলবে।