ঢাকার উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি, ভার্চুয়াল প্রচারণায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

নবী উল্লাহ, আবুল বাশার, এসএম জাহাঙ্গীর ও কফিল উদ্দিন (বা থেকে)করোনার মধ্যে উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বিএনপি। আসন্ন ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ উপ-নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। ইতোমধ্যে এই দুই আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যশোর-৬ ও বগুড়া-১ উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ প্রবেশ মুখের এই দুটি আসন রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগকে এই দুটি আসন ছেড়ে দিলে দলের নেতাকর্মীদেরও মানসিক মনোবল ভেঙে যাবে। তাছাড়া ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়েছে অল্পকিছু দিন আগে। তাই দ্রুতই এই আসনগুলোতে নির্বাচন করতেই হবে—নির্বাচন কমিশনের এমন সাংবিধানিক কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় ধরে নেওয়া যেতে পারে আগামী ১-২ মাস পরে এই আসনগুলোর নির্বাচন হবে। ততদিনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ফলে নির্বাচনে অংশ নিতেও কোনও সমস্যা থাকবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা করে ঢাকার উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির বিবেচনা নিয়ে আমরা যশোর ও বগুড়া উপনির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা করেনি। এখন আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপনির্বাচনগুলো অংশগ্রহণের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, অনেকটা হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন যশোর আর বগুড়ার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। ফলে করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনের কোনও প্রস্তুতি ছিল না। তাই এই দুটি আসেন দল অংশ নেয়নি। তবে আগামীতে ঢাকাসহ অন্যান্য উপনির্বাচনগুলোতে  অংশ নেওয়া পক্ষে আমরা।

গত ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের  সংসদ সদস্য  হাবিবুর রহমান মোল্লা আর ১০ জুলাই ঢাকা-১৮ সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মারা যান। তাদের মৃত্যুতে এই দুটি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।  

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন নবী উল্লাহ। কিন্তু উপনির্বাচনে নবী উল্লাহ ছাড়াও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। তবে দলটির একটি সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

নবী উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আমি ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে করেছি। সুতরাং উপনির্বাচনেও আমি দলের প্রার্থী হবো। অন্য কারও দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে আবুল বাশার বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ইাছ। সব মানুষের কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে, আমিও তার বাইরে নয়। দলের মনোনয়ন পেলে আমি ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচন অংশ নেবো।  

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। কিন্তু উপনির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন। এই দুজন ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন।

শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে কোনও উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হননি। তাছাড়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে মানুষের কোনও আগ্রহ নেই। চাইলেও কারও কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া যাবে না। ফলে উপনির্বাচন নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই।     

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই এলাকায় আমার জন্ম। ছাত্র জীবন থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এখানকার স্থানীয় নেতাকর্মীরাও চাচ্ছেন আমি যেন ঢাকা-১৮ আসন উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনের প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছি। আশা করি দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এই আসন থেকে নির্বাচন করেছিল। যে কারণে আমি নির্বাচনে অংশ নেইনি।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে যশোর ও বগুড়া উপ-নির্বাচন দল অংশগ্রহণ করেনি। তবে আশা করছি, ঢাকার উপনির্বাচনে দল অংশ নেবে। ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রস্তুতিও নিচ্ছি আমি। দেশের যে কোনও সংসদীয় আসনের চাইতে এই আসনে আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি সবচেয়ে ভালো।