ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমাবেশ

লেখক মুশতাক হত্যার বিচার, ছাত্র-শ্রমিক নেতা, রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। শুক্রবার (৫ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চরিত্রটা আসলে কি, এর চরিত্র হলো এটি মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু সবার মুখের ভাষা নয়, যাদের মুখের ভাষা তীর্যক, যারা এই রাষ্ট্রকে, সমাজকে পথ দেখাতে চায়, যারা সৃষ্টিশীল মানুষ, তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। আজকে মানব পাচারকারীরা হয় এই রাষ্ট্রের এমপি, সংসদ সদস্য।

তিনি অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের অপকর্ম, অনাচার-দুর্নীতি, টাকা পাচারের কথা নিয়ে আমরা যারা আলোচনা করি, সমালোচনা করি, এই সরকার তাদেরকে নিয়ে ভীত। কিন্তু যারা এই কাজগুলো করছে তারা সরকারের ছত্রছায়ায় রয়েছে।’

কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহা মির্জা বলেন, অনেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনের কথা বলছেন। তারা অজুহাত দিয়ে বলছেন, সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু সুরক্ষাসহ আর্থিক অপরাধ দমনে এই আইন প্রয়োজন। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন-২০১১, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫ এই আইনগুলো সংশোধন করলেই সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু সুরক্ষা ও শিশু পর্নোগ্রাফি এবং আর্থিক অপরাধের যে বিষয়টি বারবার সামনে আসছে তার সমাধান করা সম্ভব। তাই আমরা চাই, কোনও সংশোধন না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পূর্ণ বাতিল ও পূর্বের আইনগুলোর সংশোধন করা হোক।

এরআগে, ২৬ ফেব্রুয়ারি মিছিল থেকে আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা লিপি বলেন, সাত শিক্ষার্থীর মামলার এজাহার এমনভাবে লেখা হয়েছে, 'কতিপয় দুষ্কৃতিকারী হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের হেলমেট ভেঙেছে, পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পুড়িয়ে দিয়েছে।' তাদের এমন জ্যাকেট, হেলমেট আগুন দেওয়ার আগেই পুড়ে যায়, তাহলে গুলি করলে কি হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সাংবাদিক রুবেল বলেন, ‘যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইনতো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? একটি জরিপে দেখা গেছে, এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।’

সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট ডা. হারুন উর রশীদ, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন দুলাল।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগ থেকে সন্ত্রাসীবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।