ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করুক: জাফরুল্লাহ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সকল ওষুধের মূল্য যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে দাম বর্তমানের তুলনায় এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। অক্সিজেনের উপরেও ভ্যাট ১৯ শতাংশ। আইসিইউ’র ওষুধের দাম খুব বেশি। কাজেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারগুলো সর্বশান্ত হচ্ছে। একটি সিরিঞ্জের সুইয়ের ট্যাক্সও ৩১ শতাংশ। এই জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। আরও উপস্থিত ছিলেন গন-সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্র চিন্তার দিদারুল ভুঁইয়া, জুমে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ও বেলা‘র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা অ্যাডভোকেট রিজওয়ানা হাসান।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা জাতীয় জীবনে ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে। করোনায় একজন মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু পুরো পরিবারকে হত্যা করছে সরকার। কারণ সরকারের অব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতার অভাব, কোনো ধরণের পরোয়া না করা। একটা আইসিউতে প্রতি দিনের খরচ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা। এন্টিসেপ্টিক ও ডিজইনফেক্টেডের উপরেও ট্যাক্স আছে। আমরা ১৩০০ টাকার ওষুধ ৪০০ টাকায় দিচ্ছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে একটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এটা সরকারের ব্যর্থতা। সরকার নির্দিষ্ট বিষয়ে অজ্ঞ লোক দিয়ে সব কিছু চালাচ্ছে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘ভারতীয় কোম্পানি সময়মত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে না কারণ তাদেরও চাহিদা বেশি। এই জন্য সরকারকে নিজ দেশে উৎপাদনে যেতে বলেছিলাম।’

ড. বিজন কুমার শীলের মতো মানুষের দেশে প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তাকে অবিলম্বে ভিসা দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।

বিশ হাজার ছাত্রকে মেডিক্যালে ভর্তি করানো উচিৎ জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সবে মাত্র মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। ৫০ হাজারের মত পরীক্ষায় পাশ করেছে। তারা ১০ হাজার ভর্তি করছেন। এটা হওয়া উচিৎ ২০ হাজার। ২০ হাজার ছাত্রকে মেডিকেলে ভর্তি করানো উচিৎ। তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে ফিজিক্স-ক্যামেস্টি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বোঝে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। সমাজের শ্রেণী বোঝে কিনা? সমাজের জন্য দরদ আছে কিনা? সাধারণ মানুষের জন্য তার বিবেক কাঁদে কিনা? এই সবের কোনো কিছুই পরীক্ষায় নেই। আমরা তাদের ডাক্তার বানাচ্ছি, কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি না।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শুধুমাত্র ভুল পদক্ষেপের কারণে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এমনকি দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলার জন্যও সরকারের কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। স্বাস্থ্যখাতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষকে অভুক্ত রেখে এই লকডাউন নামের তামাশা চলতে পারে না।’

বক্তব্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততোদিন এই সত্য মানতে হবে যে শুধুমাত্র ভিন্নমতের কারণে সরকার গণস্বাস্থ্যের কীটকে অনুমোদন দেয়নি। সরকারকে কাছে প্রশ্ন- এক বছরে ১ হাজার আইসিইউ স্থাপন করতে পারেননি কেনো? এমন কী ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে মানুষ প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে।’

নূর আরও বলেন, ‘সকলকে নিয়ে সরকার একটা জাতীয় কমিটি করে করোনা মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। আপনাদের প্রতি আস্থা নেই মানুষের। কাজেই জাতীয় কমিটি করে সকলকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করুন।’

বেলা‘র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা এডভোকেট রিজওনা হাসান জুমে তার বক্তব্যে বলেন, সরকার বর্তমানে করোনা সমস্যা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছেন। এভাবে অবহেলা চলতে থাকলে সরকারের পক্ষে করোনা সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সরকারের কোথাও চেইন অব কমান্ড নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।