বিচার না হওয়ায় প্রধান কুশীলবরা দেশ ছেড়ে গেছেন। আর ১/১১-এর দায় কার—এই বিষয়ে প্রধান দুদল পরস্পরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে গত ছয় বছর পার করে দিয়েছে। দায় কার এ নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে যেমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে, তেমনই আগস্ট বিক্ষোভের জন্য দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় না আনতে পারায় ছাত্রনেতাদের মধ্যেও আছে ক্ষোভ।
২০০৯ সালের পর থেকে ১/১১ দিনটিকে কালো দিবস হিসাবে পালন করছে বিরোধী দল বিএনপি অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বরাবরই ১/১১ এর কুশীলবদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে আসছেন। যদিও সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২২ আগস্ট দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর সেনাসদস্যদের হামলার ঘটনায় সংসদীয় কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ১৩টি সুপারিশের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। দেশব্যাপী সেই সহিংসতার ঘটনায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রিকশাচালক আনোয়ার হত্যার হয়নি কোনও বিচার।
এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে মঈন উ আহমেদকে সহযোগিতা করেন নবম ডিভিশনের জিওসি লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীসহ কিছু সেনা কর্মকর্তা।
২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পরে নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মুখোমুখি অবস্থান নেয়। শুরু হয় সারাদেশে সহিংসতা। অরাজকতা আর সহিংসতার সেই সুযোগে সেনাবাহিনীর সহায়তায় জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্ধারিত হওয়া জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল বর্জন করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নামে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। যদিও সংস্কারের নামে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে বাদ দেওয়ার মাইনাস টু ফর্মুলা প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বশূন্য করার জোর চেষ্টা চালানো শুরু করে তারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও আটক করা হয়।
১/১১ এর দায় সেসময় শেষ সরকার হিসেবে বিএনপির কতোটা জানতে চাইলে বিএনপি নেতা হান্নান শাহ বলেন, পরের সময়ের চিত্র দেখলেই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন, সে সময় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য। এখানে আমাদের কোনও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয় ছিল না। আপনি কোনওভাবে মনে করেন কি না বিএনপি ফেল করেছিল বলেই ১/১১ এসেছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনও বিষয় ছিল না। যারা ওই সময় ক্ষমতায় এলেন এবং উপদেষ্টা হিসেবে রয়ে গেলেন, তাদের মুখ খুলতে দেখা যায় না। কারণ এটা একটা ষড়যন্ত্র ছিল। যার ফলে লাভবান হয়েছে কেবল আওয়ামী লীগ।
টিআইবির উদ্যোগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ২০০৭-৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের ভূমিকা শীর্ষক প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে ১/১১-এর মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দায়িত্বশীল ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার কারণেই সেনাবাহিনীকে দেশ পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে হয়। যা কোনওভাবেই আমাদের প্রত্যাশিত নয়।
/এমএনএইচ/